লাগাতার বৃষ্টি-ধসে সিকিম-শিলিগুড়ি যোগাযোগ বিপর্যস্ত, খাদ্যসঙ্কটের আশঙ্কা

লাগাতার বৃষ্টি ও পাহাড়ি ধসে সিকিম এবং শিলিগুড়ির (Sikkim–Siliguri) মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে গোটা দেশের সঙ্গে সিকিমকে যুক্ত…

লাগাতার বৃষ্টি-ধসে সিকিম-শিলিগুড়ি যোগাযোগ বিপর্যস্ত, খাদ্যসঙ্কটের আশঙ্কা

লাগাতার বৃষ্টি ও পাহাড়ি ধসে সিকিম এবং শিলিগুড়ির (Sikkim–Siliguri) মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে গোটা দেশের সঙ্গে সিকিমকে যুক্ত করা একমাত্র প্রধান রুট—১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। এর ফলে শুধু পর্যটক ও সাধারণ মানুষের যাতায়াতই নয়, বরং ভারত–চিন সীমান্তে দায়িত্ব পালনরত সেনাবাহিনী ও সিকিমের সাধারণ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

সিকিম ও শিলিগুড়ির মধ্যে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক পাহাড়ি ধসের কারণে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। লাগাতার ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি মাটি ও পাথর গড়িয়ে এসে সড়কের বড় অংশ ঢেকে ফেলেছে। জাতীয় সড়ক পরিকাঠামো উন্নয়ন দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ১৫ আগস্টের মধ্যেই এই রাস্তা চালু করার চেষ্টা চলছে, কিন্তু ক্রমাগত বৃষ্টিপাতের কারণে মেরামতির কাজ অত্যন্ত ধীর গতিতে এগোচ্ছে।

   

পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে নতুন করে তৈরি হওয়া ৭১৭(এ) জাতীয় সড়কের সেতুর বেহাল অবস্থা। বুধবার সকালে প্রবল ঝড়বৃষ্টির জেরে সেতুর অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে বিকল্প পথও প্রায় অচল হয়ে পড়ে। এর ফলে শিলিগুড়ি থেকে সিকিমে পণ্য সরবরাহ ও যাতায়াত সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

ভারী যানবাহনের জন্য গরুবাথান–লাভা–আলগাড়া–পেডং রুট ব্যবহার করা হচ্ছে। ছোট গাড়ি এবং হালকা পরিবহনের ক্ষেত্রে দার্জিলিং থেকে যামুনি হয়ে গরুবাথান অথবা ঘুম থেকে পেশক রোড হয়ে তিস্তা বাজার যাওয়ার পথ খোলা রয়েছে। তবে এসব বিকল্প পথ দীর্ঘ, দুর্গম এবং খারাপ আবহাওয়ার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ।

আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহ জুড়ে উত্তরবঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর ফলে আরও ধস ও রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। স্থানীয় প্রশাসন এবং উদ্ধারকারী দল পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকলেও, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে মেরামতির কাজ ও সরবরাহ ব্যবস্থা বারবার ব্যাহত হচ্ছে।

Advertisements

১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ থাকায় সিকিমে খাদ্য, ওষুধ এবং জ্বালানি সরবরাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে। সিকিমের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি জানিয়েছে, যদি দ্রুত রাস্তা চালু না হয়, তাহলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই খাদ্যসামগ্রী এবং পেট্রোল–ডিজেলের সঙ্কট তীব্র আকার নিতে পারে। সেনা বাহিনীর রসদ সরবরাহেও সমস্যার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

জাতীয় সড়ক পরিকাঠামো উন্নয়ন দপ্তর, সীমান্ত সড়ক সংস্থা এবং রাজ্য প্রশাসন যৌথভাবে রাস্তা পরিষ্কার ও সেতু মেরামতির কাজ করছে। তবে বৃষ্টিপাত বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মেরামতি সম্ভব নয় বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অপ্রয়োজনে ভ্রমণ না করার এবং বিকল্প রুট ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সংক্ষেপে, লাগাতার বর্ষণ ও পাহাড়ি ধসের কারণে সিকিম–শিলিগুড়ির যোগাযোগ ব্যবস্থা ভয়াবহভাবে ব্যাহত হয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের এই পরিস্থিতি শুধুমাত্র পর্যটন নয়, বরং সীমান্ত নিরাপত্তা ও সিকিমের খাদ্যনিরাপত্তাকেও বড়সড় হুমকির মুখে ফেলেছে। আগামী কয়েক দিন এই সংকট আরও গভীর হতে পারে বলে আশঙ্কা।