যুব সমাজে সস্তার নেশার ভয়াল থাবা, ট্রামাডল–ডাইসাইক্লোমিন কম্বিনেশন নিষিদ্ধ করল কেন্দ্র

‘খাও খাও বুঁদ হয়ে ডুবে যাও!’—এই আদিম আকর্ষণের পিছনে আজ ডুয়ার্স অঞ্চলের বহু তরুণের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের মুখে। মদ বা বিয়ারের দাম আকাশছোঁয়া, গন্ধ থাকায় পরিবার…

যুব সমাজে সস্তার নেশার ভয়াল থাবা, ট্রামাডল–ডাইসাইক্লোমিন কম্বিনেশন নিষিদ্ধ করল কেন্দ্র

‘খাও খাও বুঁদ হয়ে ডুবে যাও!’—এই আদিম আকর্ষণের পিছনে আজ ডুয়ার্স অঞ্চলের বহু তরুণের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের মুখে। মদ বা বিয়ারের দাম আকাশছোঁয়া, গন্ধ থাকায় পরিবার ও সমাজের চোখ এড়ানোও মুশকিল। সেই কারণে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত তরুণরা এখন ঝুঁকছে একটি ভয়ংকর, অথচ সহজলভ্য ও সস্তা ‘সিডেটিভ’ ওষুধের (Sedative Addiction) দিকে। এই ওষুধ আসলে ট্রামাডল, ডাইসাইক্লোমিন এবং অ্যাসিটামেনোফেন (প্যারাসিটামল)-এর মিশ্রণ, যা মূলত পেট ব্যথার জন্য ব্যবহার করা হতো।

তবে আজ এটি ব্যবহৃত হচ্ছে এক ভয়ানক নেশার উপকরণ হিসেবে। দিনে মাত্র ৭৫ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে পাঁচটি ক্যাপসুল খেলেই দীর্ঘসময় ‘নেশার ঘোর’—এই প্রতিশ্রুতি ডুয়ার্সের অনেক তরুণকে টানছে এই প্রাণঘাতী অভ্যাসের দিকে। এক যুবকের কথায়, “১৫ টাকায় একটা ক্যাপসুল পাওয়া যায়। দিনে পাঁচটা খেলেই অনেকটাই মাদকতা আসে। আর গন্ধ নেই, তাই ধরা পড়ার ভয়ও কম।”

   

এই ওষুধের প্রতি আসক্তি এতটাই বাড়ছে যে, সমাজের দরিদ্র অংশের মানুষরাও জলের বোতল, ভাঙা টিন বিক্রি করে নেশার টাকা জোগাড় করছে। এবং এই নেশার অর্থ জোগাতে গিয়ে তারা চুরি, ছিনতাইয়ের পথও নিচ্ছে। বীরপাড়া থানার ওসি নয়ন দাস জানান, “প্রায় প্রতিদিনই এই নেশার জেরে ছোটখাটো অপরাধে জড়িয়ে পড়া যুবকদের ধরা হচ্ছে। ছাড়া পেয়েই আবার ওই নেশায় ফিরছে তারা।”

এই বেআইনি সাপ্লাই চেনের মাধ্যমে এখন লক্ষ লক্ষ টাকার বাণিজ্য চালাচ্ছে একাধিক অসাধু চক্র। বিহার থেকে মালদা হয়ে কোচবিহার করিডর ধরে আসা ক্যাপসুলের বাক্স গোপনে পৌঁছে যাচ্ছে আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, ফালাকাটা, জয়গাঁ এবং সংলগ্ন চা বাগান এলাকায়। সম্প্রতি ফালাকাটার ট্র্যাফিক পয়েন্টে বিশেষ নাকা তল্লাশিতে উদ্ধার হয়েছে ৩৮,৪০০টি ক্যাপসুল, বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে একটি গাড়ি ও মোটরবাইক। গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনজনকে। উদ্ধার হওয়া ক্যাপসুলের বাজারমূল্য প্রায় ছয় লক্ষ টাকা।

Advertisements

এই ভয়ঙ্কর প্রবণতা রুখতে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা CDSCO। ট্রামাডল–ডাইসাইক্লোমিন–অ্যাসিটামেনোফেনের ফিক্সড ডোজ় কম্বিনেশন (FDC) নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর মানে, কোনও সংস্থা এখন থেকে এই কম্বিনেশন তৈরি করতে পারবে না। তবুও পুরনো স্টকে এবং চোরাচালানের মাধ্যমে ওষুধ ঢুকছে রাজ্যে।

চিকিৎসক শান্তনু ত্রিপাঠী বলেন, “এই কম্বিনেশনের ওভারডোজে প্রবল আচ্ছন্ন ভাব তৈরি হয়। শ্বাস মন্থর হয়ে পড়ে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। দীর্ঘদিন এই ওষুধ খেলেই অনেকে লিভার ও কিডনির স্থায়ী ক্ষতিতে ভুগছেন।”

পুলিশ প্রশাসনের মতে, এই সমস্যার মূল সমাধান শুধু আইনি পদক্ষেপ নয়, চাই জনসচেতনতা, পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সক্রিয় ভূমিকা। না হলে এই নেশা ছড়িয়ে পড়বে দাবানলের মতো, এবং এক গোটা প্রজন্ম হারিয়ে যাবে অন্ধকারের গহ্বরে।