চাঁচল: হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে (WhatsApp scandal) একের পর এক অশ্লীল ছবি ছড়িয়ে পড়ায় উত্তাল হয়ে উঠেছে মালদার চাঁচল। অভিযোগ উঠেছে, বিজেপির উত্তর মালদা জেলার যুব মোর্চার সভাপতি অয়ন রায়ের মোবাইল নম্বর থেকেই বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এমনকি দলের সাংগঠনিক গ্রুপেও অশ্লীল ছবিগুলি পাঠানো হয়েছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হয়েছে তীব্র বিতর্ক। তৃণমূলের দাবি, এটি বিজেপির অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী কোন্দলেরই প্রতিফলন। তবে অয়ন রায় দাবি করেছেন, তাঁর ফোন সম্পূর্ণ হ্যাক করা হয়েছিল এবং তাঁকে রাজনৈতিকভাবে অপদস্থ করার জন্যই এই পরিকল্পিত চক্রান্ত।
অভিযোগ অনুযায়ী, গতকাল সন্ধ্যা পাঁচটার পর থেকেই অয়ন রায় তাঁর ফোনে অস্বাভাবিক কার্যকলাপ টের পান। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি বুঝতে পারেন ফোনটির নিয়ন্ত্রণ আর তাঁর হাতে নেই। তাঁর কথায়, “হ্যাকাররা আমার হোয়াটসঅ্যাপের প্রোফাইল পিকচার পর্যন্ত বদলে দেয় এবং সেখানে অশ্লীল ছবি বসানো হয়। এটা আমাকে বদনাম করতেই করা হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করাই এদের উদ্দেশ্য।”
ঘটনা যখন বিজেপির বিভিন্ন নেতার নজরে আসে, তখন তাঁরা অয়ন রায়কে ফোন করে বিস্তারিত জানান। এরপরই তিনি চাঁচল থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগপত্রটি সাইবার থানায় পাঠানো হয়েছে এবং খুব শিগগিরই তদন্ত শুরু করা হবে।
এই ঘটনা নিয়ে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব যথেষ্ট কটাক্ষ ছুড়েছে। মালদা জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি এটিএম রফিকুল হোসেন বলেন, “বিজেপির অভ্যন্তরে গোষ্ঠী কোন্দল কত গভীরে ঢুকেছে, এই ঘটনাই তার উদাহরণ। নিজেদের মধ্যে লড়াই সামলাতে পারে না, আবার মানুষের সামনে বড় বড় কথা বলে!”
অন্যদিকে, বিজেপির উত্তর মালদা সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক অভিষেক সিংহানিয়া গোষ্ঠী কোন্দলের অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, “এটি স্পষ্টতই সাইবার হ্যাকিংয়ের ঘটনা। অয়নবাবুকে লক্ষ্য করে একটি চক্র কাজ করেছে। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যেই এই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। দলের সব গ্রুপ থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত ছবিগুলি ইতিমধ্যেই মুছে ফেলা হয়েছে।”
এই ঘটনার পর এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও শুরু হয়েছে আলোচনার ঝড়। রাজনৈতিক নেতাদের ফোন যদি এত সহজে হ্যাক হয়ে যায়, তাহলে সাধারণ মানুষের গোপনীয়তা কতটা সুরক্ষিত তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে লক্ষ্য করে আক্রমণ, হ্যাকিং এবং ভুয়ো ছবি ছড়ানোর ঘটনা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে এমন অপপ্রচার ছড়ানো এখন সাধারণ কৌশল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চাঁচল থানার পুলিশ জানায়, ফোনটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে। কোথা থেকে ছবিগুলি পাঠানো হল, ফোনে কী ধরনের ম্যালওয়্যার ঢুকেছিল, কারা এর পিছনে সবকিছু খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে হোয়াটসঅ্যাপ সার্ভারের লগ সংগ্রহ করার চেষ্টাও করা হবে।
রাজনৈতিক সংঘাত, সাইবার হামলা এবং প্রযুক্তির অপব্যবহার এই তিনের সমন্বয়ে চাঁচলের এই ঘটনা এখন আরও জটিল হয়ে উঠেছে। অয়ন রায়ের দাবি, “আমি নির্দোষ। তদন্তেই সব প্রমাণ হয়ে যাবে।” এখন নজর সাইবার তদন্তের দিকে সত্যিই কি ফোন হ্যাক হয়েছিল, না এর পেছনে লুকিয়ে আছে অন্য কোনও রাজনৈতিক জটিলতা?


