ডুয়ার্স: উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির মধ্যেও রাজনৈতিক সংঘর্ষের আগুন যেন নিভছে না। বন্যা দুর্গতদের সাহায্যে গিয়ে আক্রান্ত হলেন বিজেপির শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষ (BJP MLA Shankar Ghosh)। নাগরাকাটায় দুর্গত এলাকায় সফরে গিয়ে তাঁর গাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
সূত্রের খবর, শংকর ঘোষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে দেখা করতে ও তাঁদের পাশে দাঁড়াতে নাগরাকাটায় পৌঁছান। ঠিক সেই সময় হঠাৎই একদল দুষ্কৃতী তাঁর গাড়ির উপর ইট-পাথর ছুড়তে শুরু করে। মুহূর্তে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিধায়কের গাড়ির কাঁচ ভেঙে যায়, আশেপাশের গাড়িগুলিতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাঁর সঙ্গে থাকা বিজেপি কর্মীরাও রেহাই পাননি।
এখানেই শেষ নয়, বিজেপি সাংসদ খগেন মূর্মূও একই ঘটনায় আক্রান্ত হন। তাঁর গাড়িতেও পাথরবৃষ্টি চলে বলে অভিযোগ। বিজেপির পক্ষ থেকে সরাসরি অভিযোগ তোলা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের বিরুদ্ধে। তাঁদের দাবি, ইচ্ছাকৃতভাবে রাজনৈতিক হিংসা সৃষ্টি করে সাহায্যের কাজ বন্ধ করার চেষ্টা করেছে শাসকদল।
বিধায়ক শংকর ঘোষ ঘটনার পর সাংবাদিকদের বলেন, “আমি মানুষের দুর্দশা দেখতে ও তাঁদের পাশে দাঁড়াতে এসেছিলাম। কিন্তু শাসকদলের গুন্ডারা আমাদের উপর হামলা চালাল। এটা প্রমাণ করে যে বন্যা মোকাবিলায় মানুষের পাশে নয়, রাজনৈতিক স্বার্থই তাঁদের একমাত্র উদ্দেশ্য।”
অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা দাবি করেছে, বিজেপি আগে থেকেই পরিকল্পনা করে এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি করতে এসেছিল। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, “লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, উত্তরবঙ্গ বিশেষ করে ডুয়ার্স অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে সংঘাতের কেন্দ্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়েও রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থামছে না, বরং তা আরও তীব্র আকার নিচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের মতে, “মানুষ এখন ত্রাণ ও সাহায্যের অপেক্ষায়, কিন্তু রাজনীতি সবকিছুকে ঢেকে দিচ্ছে।”
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হামলার ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যেই কয়েকজনকে আটক করেছে এবং ঘটনাস্থলে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ডুয়ার্সের একাধিক এলাকা বন্যায় বিপর্যস্ত। বহু গ্রাম জলমগ্ন, হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষ থেকে সাহায্যের হাত বাড়ানো হলেও রাজনৈতিক সংঘাত সেই কাজকে বাধাগ্রস্ত করছে বলেই অভিযোগ উঠছে।
নাগরাকাটায় ঘটে যাওয়া এই হামলা উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক অস্থিরতার নতুন অধ্যায় হয়ে রইল। মানবিক সংকটের মুহূর্তে রাজনৈতিক সহিংসতার ছায়া যে রাজনীতির নীচুস্তরে কতটা গভীরভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তা ফের একবার স্পষ্ট হয়ে গেল।