শিলিগুড়ি: রাজ্যের উন্নয়ন এবং উত্তরবঙ্গের দাবি-দাওয়া নিয়ে এবার সরাসরি সংঘাতে বিজেপি। সোমবার সকাল থেকেই উত্তপ্ত শিলিগুড়ির রাজপথ। ‘উত্তরকন্যা অভিযান’(Uttarkanya Abhiyan)-এর ডাক দিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব একযোগে পথে নামলেন। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
এই অভিযানের নেতৃত্বে শুভেন্দু অধিকারী, মনোজ টিগ্গা, এবং সুকান্ত মজুমদারের মতো রাজ্যের প্রথম সারির বিজেপি নেতৃত্ব। সকাল থেকেই শিলিগুড়ির তিনবাত্তি মোড়, হাসমিচক ও রঙ্গাপানি এলাকায় জড়ো হতে থাকেন বিজেপির হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক। তাঁদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, দলীয় পতাকা।
পুলিশ প্রশাসন কড়া নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে রেখেছিল। জলকামান, গার্ডরেল, টিয়ারগ্যাসের বন্দোবস্ত ছিল সর্বত্র। তবে বিজেপি কর্মীদের রোখা যায়নি। তাঁদের ‘উত্তরকন্যা অভিযান’ রুখতে গেলে কিছু এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি, এমনকি ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কিছু বিজেপি কর্মীকে আটকও করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
একাধিক বিষয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে শুভেন্দু বলেন, “উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন বলে কিছু নেই। মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর উত্তরকন্যা শুধু দেখনদারি। এখানে প্রকল্প আসে না, বরাদ্দ হয় না। বাংলার এই অংশকে বঞ্চনা করা হচ্ছে দিনের পর দিন।”
তিনি আরও বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোট এলেই উত্তরবঙ্গে আসেন, বাকিটা সময় এই অঞ্চলের মানুষকে ভুলে যান। উত্তরকন্যা আসলে ‘কন্যা নয়, প্রতারণা’। আমরা এই ভাওতাবাজি আর মেনে নেব না।”
বিজেপি নেতৃত্ব পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দেন, এই অভিযান শুধুমাত্র প্রতীকী নয়, বরং এর মাধ্যমে রাজ্যজুড়ে আন্দোলনের বার্তা দেওয়া হচ্ছে। মনোজ টিগ্গা বলেন, “উত্তরবঙ্গের মানুষ বছরের পর বছর ধরে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু এখানে কোনও শিল্প আসেনি, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নেই, শিক্ষার পরিকাঠামো দুর্বল। উত্তরকন্যা প্রকল্প কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে।”
বিজেপির মিছিল যাতে উত্তরকন্যার অফিসের সামনে পৌঁছাতে না পারে, সে কারণে কড়া ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন। বহু জায়গায় রাস্তা ঘিরে ফেলেছিল পুলিশ। গার্ডরেল ও ব্যারিকেড দিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল রাস্তাগুলি। কিছু জায়গায় বিজেপি কর্মীরা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও জলকামান চালায়।
তবে বিজেপি নেতারা জানিয়েছেন, আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ছিল। পুলিশের আগ্রাসন তার প্রমাণ যে, রাজ্য সরকার বিরোধী কণ্ঠ রোধ করতে চাইছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, লোকসভা ভোটের আগে উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে রাজ্য রাজনীতি। উত্তরবঙ্গে বিজেপির জমি ধরে রাখার লড়াইয়ে ‘উত্তরকন্যা অভিযান’ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। অন্যদিকে, তৃণমূল এখনই পাল্টা প্রতিক্রিয়া না দিলেও, রাজনৈতিক উত্তেজনা আগামী দিনে আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা।