আলিপুরদুয়ার: এক কেজি চায়ের (Gold Tea) দাম যদি হয় এক লক্ষ টাকা, তাহলে তা চা-প্রেমীদের কৌতূহল জাগানো স্বাভাবিক। ডুয়ার্সের মাঝেরডাবড়ী চা বাগান এবার হাজির করেছে এমনই এক বিরল চা—‘গোল্ড টি’। নামের সঙ্গে এর দামের মিল শুধু প্রতীকী নয়, বরং এই চায়ের মধ্যে সত্যিই রয়েছে সোনার ছোঁয়া। দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক ট্রেড ফেয়ারে এই বিশেষ চা প্রদর্শনের মাধ্যমে বিশ্ববাজারে নিজের জায়গা করে নিতে চলেছে বাংলার এই অভিনব উদ্ভাবন।
গত সোমবার মাঝেরডাবড়ীর ডাবড়ী টি লাউঞ্জে এক সাংবাদিক বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গোল্ড টি’ বাজারে আনা হয়। এই চা দুই ধরনের ভিন্ন ফ্লেভারে তৈরি হবে। আগে এই চা বাগানের মুনলাইট টি এবং ম্যাঙ্গো টি দেশি-বিদেশি চা-প্রেমীদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হল সোনালি ঔজ্জ্বল্যে ভরা ‘গোল্ড টি’।
চা বাগানের ম্যানেজার চিন্ময় ধর জানান, দেশে এই প্রথমবারের মতো খাওয়ার যোগ্য সোনা বা ‘এডিবল গোল্ড’ ব্যবহার করে চা তৈরি করা হয়েছে। এই সোনার গুঁড়ো যোগ করার সঙ্গে রয়েছে সুগন্ধি গোলাপের পাপড়ি, যা এর স্বাদ এবং গন্ধকে করে তুলেছে অতুলনীয়। শুধু স্বাদেই নয়, এই চায়ের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যগত উপকারিতাও। তাঁর দাবি, নিয়মিত এই চা পান করলে ইমিউনিটি পাওয়ার বৃদ্ধি পাবে এবং হজমশক্তি উন্নত হবে। অর্থাৎ, এটি শুধু প্রিমিয়াম মানের চা নয়, বরং স্বাস্থ্যসম্মত পানীয়ও বটে।
চিন্ময় ধর বলেন, ‘‘আমরা ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী বিশেষ চা প্রস্তুত করতে পারি—এটাই আমাদের বিশেষত্ব। বহুদিন ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর পর ‘গোল্ড টি’ তৈরির প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে। প্রথম ধাপেই আমরা এটি দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক ট্রেড ফেয়ারে নিয়ে যাচ্ছি।’’
বর্তমানে মাঝেরডাবড়ী চা বাগান ৪২ ধরনের ফ্লেভারের চা উৎপাদন করছে। ডুয়ার্সের চা শিল্প যেখানে একাধিক বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জের মুখে, সেখানে এই ধরনের উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিঃসন্দেহে শিল্পে নতুন দিশা দেখাচ্ছে। গোল্ড টি-র মতো একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রোডাক্ট বাজারে আনার মাধ্যমে শুধু ব্র্যান্ড ভ্যালুই বাড়বে না, বিদেশি মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
চা শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ববাজারে ‘লাক্সারি টি’-র চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে প্রিমিয়াম মানের ও অভিনব স্বাদের চায়ের জন্য ক্রেতারা উচ্চমূল্য দিতে দ্বিধা করেন না। ফলে, দুবাই ট্রেড ফেয়ারে ‘গোল্ড টি’-র প্রদর্শনী আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের নজর কাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই চা ইতিমধ্যেই দিল্লির ডাবড়ী আউটলেটে বিক্রি শুরু হয়েছে। সেখানকার প্রথম দফার সাড়া দেখে কর্তৃপক্ষ আশাবাদী যে বিদেশি বাজারেও এটি সমান জনপ্রিয়তা পাবে। দুবাইয়ে প্রদর্শনের পর আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার পাওয়ার ব্যাপারে তারা আত্মবিশ্বাসী।
চিন্ময় ধর বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য শুধু চা বিক্রি নয়, বরং ভারতীয় চা-কে বিশ্বমঞ্চে প্রিমিয়াম প্রোডাক্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। গোল্ড টি সেই প্রচেষ্টারই এক বিশেষ ধাপ।’’
বাংলার চা শিল্পের গৌরবময় ইতিহাসে ‘গোল্ড টি’ হয়তো একটি নতুন অধ্যায় যোগ করতে চলেছে। স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলার চায়ের সুনাম ছড়িয়ে দিতে এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য।