আজ ১৭ অক্টোবরশুক্রবার। শরতের এই মনোরম সময়ে বাংলার আকাশে মেঘের ছায়া পড়েছে, আর সাধারণ মানুষের মনে একটা মিশ্র অনুভূতি জাগছে কোথাও বৃষ্টির ছোঁয়ায় ভিজে যাওয়ার আশা, কোথাও আকাশে রোডের খেলার প্রত্যাশা। ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (আইএমডি)-এর সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে, উত্তর বঙ্গ এবং দক্ষিণ বঙ্গ উভয় অঞ্চলেই আজ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি বা বজ্রঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
মনসুন পুরোপুরি বিদায় নিয়েছে বলে ঘোষণা হলেও, বঙ্গোপসাগরের উত্তর অংশে কম চাপের প্রভাব এবং উপরের বায়ুমণ্ডলে সৃষ্ট অস্থিরতা এই বৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই আবহাওয়া পরিস্থিতি কৃষকদের জন্য একটা স্বস্তির খবর হলেও, শহুরে জীবনযাত্রায় যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে কিছুটা বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
অভিষেকের ‘আমি ডিজিটাল যোদ্ধা’ কর্মসূচি নিয়ে উচ্ছ্বাস কুণালের
আসুন, আইএমডি-এর বিশদ পূর্বাভাসের ভিত্তিতে জেনে নিই আজকের আবহাওয়া কেমন যাবে উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গে।উত্তর বঙ্গের কথা প্রথম বলি। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা এবং উত্তর দিনাজপুরের মতো জেলাগুলোতে আজ আকাশ মেঘলা থাকবে বলে আইএমডি জানিয়েছে।
সকাল থেকে বিকেল অবধি হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায় বজ্রঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টিপাত হতে পারে। তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২৮-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে, আর সর্বনিম্ন ২২-২৪ ডিগ্রি। আর্দ্রতার মাত্রা ৮০-৯০ শতাংশের কাছাকাছি থাকায় বাতাসে একটা আর্দ্রতাপূর্ণ অনুভূতি জাগবে, যা চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর হতে পারে কিন্তু চা ফসলের জন্য উপকারী।
আইএমডির কলকাতা অঞ্চলীয় কেন্দ্রের সাপ্তাহিক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় সপ্তাহে (১৭-২৩ অক্টোবর) উত্তর বঙ্গে বিচ্ছিন্নভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা, যা সামগ্রিকভাবে স্বাভাবিকের কাছাকাছি থাকবে।
তবে, পূর্বের সপ্তাহে বর্ষার অবশিষ্টাংশে কিছু জেলায় ভারী বৃষ্টি হয়েছে, যা নদী-নালার জলস্তর বাড়িয়েছে। আজকের এই বৃষ্টি যদি অতিরিক্ত হয়, তাহলে দার্জিলিং-এর মতো পাহাড়ি পথে স্লিপারি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, “শরতের এই বৃষ্টি চা পাতাকে সতেজ করে, কিন্তু রাস্তায় যাতায়াত কঠিন হয়ে যায়।”
আইএমডি সতর্ক করেছে, বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গায় না থাকতে এবং মাছ ধরার জন্য বাইরে না যাওয়ার জন্য।এবার দক্ষিণ বঙ্গের দিকে নজর দিন। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান এবং পূর্ব মেদিনীপুরের মতো জেলাগুলোতে আজও মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকবে।
আইএমডির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বিচ্ছিন্নভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি বা থান্ডারশাওয়ার হতে পারে, বিশেষ করে সকালের দিকে কলকাতায় বৃষ্টির ছোঁয়া লাগার সম্ভাবনা। তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩১-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৪-২৫ ডিগ্রি থাকবে, যা অক্টোবর মাসের গড়ের সঙ্গে মিলে যায়। বাতাসের গতি ১০-১৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা, দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসবে, যা বৃষ্টির সঙ্গে মিলে একটা শীতলতা ছড়াবে।
দক্ষিণ বঙ্গে সামগ্রিক বৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিকের কাছাকাছি থাকবে বলে আইএমডির দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে উল্লেখ আছে। কিন্তু সাম্প্রতিক দুর্গাপূজার সময় ভারী বৃষ্টির কারণে কলকাতার রাস্তায় জলাবদ্ধতা দেখা গিয়েছে, আর আজকের এই হালকা বৃষ্টি সেই সমস্যাকে পুনরায় জাগিয়ে তুলতে পারে।
শহরের যাত্রীবাহীরা বলছেন, “অফিস যাওয়া-আসায় ছাতা নিয়ে বেরোতে হচ্ছে, কিন্তু বৃষ্টির ছন্দে শরতের সৌন্দর্য অনুভব করা যাচ্ছে।” আইএমডি জেলাভিত্তিক পূর্বাভাসে কোনো রেড বা অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করেনি, তবে ইয়েলো অ্যালার্টের মতো সতর্কতা দিয়েছে বজ্রঝড় এবং হঠাৎ বৃষ্টির জন্য। কৃষকরা এই বৃষ্টিকে ধানের ফসলের জন্য আশীর্বাদ মনে করছেন, কারণ অক্টোবরের শেষভাগে শুকনো আবহাওয়া হলে ফসলের ক্ষতি হয়।