কোচবিহার: মাথাভাঙ্গার ঘোকসাডাঙ্গা থানার পুলিশের তৎপরতায় গ্রেপ্তার করা হল এক বাংলাদেশি যুবককে (Bangladeshi Youth Arrest), যার হাতে পাওয়া গেছে ভারতীয় জাল আধার কার্ড এবং বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্ট। ধৃতের নাম শংকর বর্মন। তার বয়স আনুমানিক ৩০ বছর।
ঘোকসাডাঙ্গা থানার ওসি কাজল দাসের নেতৃত্বে একটি বিশেষ অভিযানে এই বাংলাদেশি যুবককে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার মাথাভাঙ্গা ২ নম্বর ব্লকের উনিশ বিশা গ্রাম পঞ্চায়েতের বণিক পাড়া এলাকা থেকে গত শুক্রবার (১লা আগস্ট) গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দীর্ঘ নজরদারির পর এই অভিযান চালানো হয়। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, শংকর বর্মন ২০২৪ সালের ৩রা জুলাই বৈধ ভিসা নিয়ে বাংলাদেশের চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্ত হয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এরপর সে ৪ঠা আগস্ট ফের বাংলাদেশে ফিরে যায়।
তবে তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। ফের সে চোরাপথে বাংলাদেশের সিলেট জেলার বাগলি বাজার সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের মেঘালয়ে প্রবেশ করে। তারপর সোজা কোচবিহার জেলার মাথাভাঙ্গার বণিক পাড়া এলাকায় গা ঢাকা দেয়। পুলিশ সন্দেহ করছে, তার এই গা-ঢাকা দেওয়ার পেছনে স্থানীয় কোনও ব্যক্তির সহযোগিতা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠছে—যে যুবকের বৈধ পাসপোর্ট ছিল, সে কেন অবৈধভাবে ফের ভারতে প্রবেশ করল? কারা তাকে এই কাজে সহায়তা করেছিল? কীভাবেই বা তার নামে একটি ভারতীয় আধার কার্ড তৈরি হল? স্থানীয় কোনো চক্রের হাত আছে কি না, তা নিয়েও চলছে জোর তদন্ত।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের একবার অবৈধ অনুপ্রবেশ ইস্যুতে রাজ্য রাজনীতি সরগরম হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিরোধীরা ইতিমধ্যেই অভিযোগ তুলতে শুরু করেছে, সীমান্তে নিরাপত্তা ফাঁকি থেকেই একের পর এক বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ করছে এবং স্থানীয় রাজনৈতিক আশ্রয়ে তারা দীর্ঘদিন এখানে বসবাস করছে।
মাথাভাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সন্দীপ গড়াই জানিয়েছেন, ধৃতের বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা রুজু করা হয়েছে। শনিবার (২ আগস্ট) তাকে মাথাভাঙ্গা মহকুমা আদালতে তোলা হয়েছে এবং পুলিশ তার পুলিশি হেফাজতের আবেদন করেছে। পাশাপাশি গোটা ঘটনার পেছনে কোনও আন্তর্জাতিক বা আন্তঃরাজ্য চক্র জড়িত আছে কি না, সে দিকটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ঘটনার তদন্তে ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এখনও পর্যন্ত এই অনুপ্রবেশের ঘটনায় স্থানীয় কোনও ব্যক্তি বা সংগঠনের নাম সামনে আসেনি। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, দীর্ঘদিন ধরেই সে সীমান্ত এলাকা সম্পর্কে ওখানকার ভূগোল সম্পর্কে অবগত ছিল, যা তাকে অবৈধভাবে প্রবেশে সাহায্য করেছে।
এই ঘটনায় আবারও প্রশ্ন উঠছে—সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসন কতটা তৎপর? এবং এক বাংলাদেশি যুবকের পক্ষে ভারতের সরকারি নথি কীভাবে তৈরি হল, সেটা নিয়েও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তর্জা।