অয়ন দে, কোচবিহার: জাল নথি ব্যবহার করে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করে বাংলাদেশ ফেরার পথে চ্যাংড়াবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে (Changrabandha Border) আটক হয়েছেন এক বাংলাদেশি মহিলা। আটক মহিলার নাম হোসনেয়ারা পারভিন। এই ঘটনায় সীমান্ত এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এবং দেশের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের কর্মকর্তারা তাকে জাল পাসপোর্টসহ আটক করেছেন এবং জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন। এই ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্তে জাল নথি ব্যবহারের দ্বিতীয় ঘটনা, যা নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটির দিকে ইঙ্গিত করে।
ঘটনার বিবরণ
শুক্রবার চ্যাংড়াবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে হোসনেয়ারা পারভিন নামে ওই মহিলা বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য পৌঁছান। তিনি ভারতীয় পাসপোর্ট দেখালেও, নথি পরীক্ষার সময় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। বিশদ পরীক্ষার পর জানা যায়, পাসপোর্টটি জাল নথির ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হোসনেয়ারা জানান, তিনি ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছিলেন এবং আর ফিরে যাননি। এরপর তিনি ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং জাল নথি ব্যবহার করে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেন। বাংলাদেশে ফেরার উদ্দেশ্যে তিনি চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্তে আসেন, কিন্তু ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের তৎপরতায় ধরা পড়েন।
নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ
এই ঘটনা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং সীমান্ত নজরদারি ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। জাল নথি ব্যবহার করে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরির ঘটনা শুধু ব্যক্তিগত অপরাধ নয়, বরং এটি সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রের অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, “এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে। সীমান্তে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা উচিত।” উল্লেখ্য, মাত্র কয়েকদিন আগে একই চেকপোস্টে জাল নথি ব্যবহার করে আরেক বাংলাদেশি মহিলা আটক হয়েছিলেন, যা এই ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি নির্দেশ করে।
প্রশাসনের পদক্ষেপ
ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা হোসনেয়ারাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জাল পাসপোর্ট তৈরির চক্র এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনায় একটি বৃহত্তর জালিয়াতি চক্রের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ) এবং স্থানীয় পুলিশ যৌথভাবে তদন্ত শুরু করেছে। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা এই ঘটনার তদন্ত করছি। জাল নথি তৈরির পেছনে যারা রয়েছে, তাদের শনাক্ত করা হবে।”
সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট
জাল পাসপোর্ট ব্যবহারের ঘটনা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নতুন নয়। গত বছর কলকাতা পুলিশ উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা থেকে মনোজ গুপ্ত নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিল, যিনি জাল পাসপোর্ট তৈরির একটি বড় চক্রের মূল মাথা ছিলেন। এছাড়া, বাংলাদেশি নাগরিকদের জাল নথি ব্যবহার করে ভারতে বসবাসের একাধিক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এই ঘটনাগুলো সীমান্তে নজরদারি এবং পাসপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়ায় আরও কঠোরতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে।
সমাজে প্রভাব
চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্তে এই ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা রমেশ সরকার বলেন, “এই ধরনের ঘটনা আমাদের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি। প্রশাসনের উচিত জাল নথির ব্যবহার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।” এই ঘটনা সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার দাবি আরও প্রবল করেছে।
হোসনেয়ারা পারভিনের আটক হওয়ার ঘটনা জাল পাসপোর্ট তৈরির চক্রের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। এই ঘটনা শুধু সীমান্ত নিরাপত্তার প্রশ্নই নয়, বরং অভ্যন্তরীণ নথি যাচাই প্রক্রিয়ার দুর্বলতাকেও প্রকাশ করেছে। প্রশাসনের তৎপরতা এবং তদন্তের মাধ্যমে এই চক্রের মূল হোতাদের ধরা সম্ভব হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে। চ্যাংড়াবান্ধার এই ঘটনা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে।