বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনায় ফুলবাড়ি আইসিপিতে বাণিজ্য কার্যত বন্ধ

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অবনতির (Bangladesh-India tensions) প্রভাব পড়েছে ফুলবাড়ি ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টে (আইসিপি) বাণিজ্যে। এই সীমান্ত পয়েন্টটি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেনের…

Bangladesh-India Tensions Disrupt Trade at Fulbari ICP

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অবনতির (Bangladesh-India tensions) প্রভাব পড়েছে ফুলবাড়ি ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টে (আইসিপি) বাণিজ্যে। এই সীমান্ত পয়েন্টটি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হলেও বর্তমানে বেশিরভাগ অর্থ বিনিময় কেন্দ্র কার্যত ফাঁকা পড়ে রয়েছে।

ফুলবাড়ি সীমান্তের একটি মানি এক্সচেঞ্জ কাউন্টারের ব্যবসায়ী সঞ্জয় ঘোষ ANI-কে জানান, তাদের ব্যবসায়ে অত্যন্ত মন্দা চলছে। ভারতের নাগরিকরা আগে পর্যটন বা ব্যবসার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে যেতেন, যা মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসার একটি প্রধান উৎস ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি তাদের আয়ের পথ কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে।

   

ব্যবসার মন্দা: ব্যবসায়ীদের হতাশা
সঞ্জয় ঘোষ বলেন, “এখন আর বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য সহজে ভিসা পাওয়া যাচ্ছে না। এর ফলে আমাদের ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোভিড মহামারির আগেও আমাদের ব্যবসা অনেক ভালো ছিল। কিন্তু কোভিড-পরবর্তী সময়ে তা কিছুটা কমে আসে। তবে শেখ হাসিনার ক্ষমতা হারানোর পর পরিস্থিতি একেবারে খারাপ হয়ে গেছে। আমরা চাই বাংলাদেশের অবস্থা ভালো হোক। তাদের অবস্থা ভালো হলে আমাদেরও ভালো হবে।”

অন্য আরেক মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী প্রদীপ সিংহ জানান, “বর্তমানে প্রতিদিন মাত্র ৩০-৪০ জন বাংলাদেশি ভারত আসছেন। আপনি বুঝতেই পারছেন, এভাবে আমাদের ব্যবসা কেমন চলছে। আমরা চাই পরিস্থিতি আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে উঠুক।”

চিকিৎসার জন্য আসা বাংলাদেশি রোগীদের অসুবিধা
বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য ভারতে আসা রোগীর সংখ্যাও অনেক কমে গেছে। এদের মধ্যে একজন, সাকলেন আহমেদ, যিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে এসেছেন, ANI-কে বলেন, “ভারতে চিকিৎসার মান খুব ভালো। কিন্তু অনেক জায়গায়, যেমন বেঙ্গালুরুতে, বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটা ঠিক নয়। আমি চাই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ভালো থাকুক।” তিনি আরও জানান, চিকিৎসা ও অন্যান্য পরিষেবার ওপর এমন নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলছে।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েন
বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক যথেষ্ট টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যা অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে, তার শাসনামলে সংখ্যালঘু বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর একাধিক হামলার খবর সামনে এসেছে। এর ফলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে আগামী ৯ ডিসেম্বর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী ঢাকা সফর করবেন এবং সেখানকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক সমস্যাগুলি সমাধানের প্রয়াস নেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ফুলবাড়ি সীমান্তের গুরুত্ব
ফুলবাড়ি আইসিপি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র। প্রতিদিন শতাধিক মানুষ এই চেকপোস্ট ব্যবহার করতেন চিকিৎসা, ব্যবসা বা পর্যটনের জন্য। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে সেই সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে গেছে।
সীমান্ত এলাকার মানুষেরা এই পরিস্থিতিতে অত্যন্ত অসুবিধায় পড়েছেন। একদিকে সীমান্ত ব্যবসায়ীরা লোকসানে জর্জরিত, অন্যদিকে চিকিৎসা ও অন্যান্য পরিষেবার জন্য ভারতে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।

সম্ভাব্য সমাধানের পথ
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে হলে দুই দেশকেই কূটনৈতিক স্তরে আরও ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার বিষয়গুলি নিয়ে ভারতের উদ্বেগের সঠিক প্রতিক্রিয়া দেওয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে, ভারতেরও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশি রোগী ও পর্যটকদের জন্য সহজ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের এই টানাপোড়েন দুই দেশের মানুষের জীবন ও বাণিজ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। ফুলবাড়ি সীমান্তে বাণিজ্যের কার্যত বন্ধ হওয়া এই সমস্যার একটি উদাহরণ মাত্র। দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক পুনঃস্থাপন করা গেলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। তাই আগামী দিনে উভয় দেশের নেতৃত্বের কাছ থেকে আরও সক্রিয় এবং দায়িত্বশীল ভূমিকার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।