অয়ন দে, আলিপুরদুয়ার: গত ৫ অক্টোবর প্লাবনের জলে উড়ে গিয়েছিল হলং নদীর উপর কাঠের সাঁকো। তারপর চারদিন কেটে গেলেও সেই সাঁকো মেরামতের কাজ শুরু হয়নি। তার ফলে জলদাপাড়া (Jaldapara) ট্যুরিস্ট লজ কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে।
সেখানে পর্যটকরা যাতায়াত করতে পারছেন না। বুকিং বাতিল করতে হচ্ছে। তাতে লজ কর্তৃপক্ষের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। ট্যুরিস্ট লজের কর্মীরা ও নদীর ওপারে থাকা বনকর্মী ও তাঁদের পরিবারের লোকজনও সমস্যায় পড়েছেন। কবে সেই সাঁকো সংস্কার করা হবে, সেকথা বলতে পারছেন না কেউই। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের বিভাগীয় বনাধিকারিক পারভিন কাশোয়ানের আশ্বাস, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটা দেখছে।’
ট্যুরিস্ট লজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সেখানকার কর্মীরা বর্তমানে নদী পার হচ্ছেন হেঁটে। পুরুষ কর্মীরা হাফপ্যান্ট পরে নদী পার হচ্ছেন। আর সঙ্গে রাখছেন ফুলপ্যান্ট। ওপারে গিয়ে সেই ফুলপ্যান্ট পরে নিচ্ছেন। কারণ ফুলপ্যান্ট পরে নদী পার হলে তা ভিজে যেতে পারে। তবে মহিলা কর্মীদের তো আর সেই সুবিধা নেই। তাঁরা শাড়ি বা চুড়িদার পরেই নদী পার হচ্ছেন। ওপারে গিয়ে জামাকাপড় শুকিয়ে নেওয়ারও তো কোনও ব্যবস্থা নেই।
জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট লজের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার নিরঞ্জন সাহা জানালেন, লজে ৫২ জন কর্মী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন মহিলা কর্মী রয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘আমরা ফুলপ্যান্ট ব্যাগে ভরে হাফপ্যান্ট পরে নদী পারাপার করছি। নদীর পাড়ে উঠে আবার ফুলপ্যান্ট পরছি। এই হ্যাপা যে আর কতদিন পোহাতে হবে জানি না।’
এ তো গেল নদী পার হওয়ার কথা। সাঁকো না থাকার ফলে তো লজের আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে। ইতিমধ্যেই জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট লজের ক্ষতির পরিমাণ কয়েক লক্ষ টাকা বলে দাবি করেছেন নিরঞ্জন। এই পর্যটনের মরশুমে লজের প্রায় সব ঘরই প্রতিদিন বুক করা ছিল বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় সেইসব বুকিং বাতিল করা হয়েছে। নিরঞ্জন জানালেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত লজের ৩৪টি রুমের মধ্যে ২৮টি রুমের বুকিং ছিল। সব বাতিল হয়ে গিয়েছে। দৈনিক প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে।
এদিকে, পুজোর ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ার পর বুধবার থেকে ইংরেজিমাধ্যমের বিভিন্ন স্কুল খুলে গেলেও হলং নদীর ওপারের বাসিন্দা পরিবারগুলির সন্তানরা স্কুলে যেতে পারেনি। প্রায় ১৪ জন ছাত্রছাত্রী স্কুলে যেতে পারেনি এদিন। একই অবস্থা জলদাপাড়া নর্থ রেঞ্জ ও নর্থ বিটের বনকর্মীদের।
নর্থ রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার রামিজ রজার জানালেন, সেখানে প্রায় ৪০ জন বনকর্মী রয়েছেন। এছাড়াও তাঁদের পরিবার রয়েছে। রামিজ বললেন, ‘আমরা ছেলেরা তো হাফপ্যান্ট পরে নদী পারাপার করে আবার ফুলপ্যান্ট পরে নিচ্ছি। কিন্তু মহিলাদের তো সেই সুবিধা নেই। ফলে তারা এক প্রকার গৃহবন্দি হয়ে রয়েছেন।’
ওপারে আটকে থাকা জনৈক বনকর্তা জানালেন, ‘পরিচারিকারা নদী পার হয়ে আসতে পারছেন না। আমাদের পরিবারের মহিলা সদস্যরা মাদারিহাট আসতে পারছেন না। ওপারে তো জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান ছাড়া আর কিছুই নেই। দোকানপাট সবই তো এপারে।’
এর আগেও যখন হলং নদীর সেই সেতু ভেঙেছিল, তখন নদী পারাপারে নৌকা দেওয়া হয়েছিল। এবারও যতদিন কোনও ব্যবস্থা না হচ্ছে, ততদিন একটা নৌকা দেওয়ার দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা।