বসিরহাট: বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে জেলা পুলিশের এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সীমান্ত নজরদারিতে প্রযুক্তির নতুন দিক উন্মোচন করতে বসিরহাট থানায় চালু হল অত্যাধুনিক স্মার্ট ইন্টারগেট কন্ট্রোল রুম, যার মাধ্যমে মোট সাড়ে পাচশো সিসিটিভি ক্যামেরা (CCTV Cameras) দিয়ে একযোগে নজরদারি চালানো হবে সীমান্তবর্তী সংবেদনশীল এলাকায়।
মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই কন্ট্রোল রুমের উদ্বোধন করেন বারাসত রেঞ্জের ডিআইজি ভাস্কর মুখোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন বসিরহাট জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার ডঃ হোসেন মেহেদী রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পার্থ ঘোষ, জেলা পুলিশের আধিকারিক দুর্বার বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বসিরহাট থানার আইসি রক্তিম চট্টোপাধ্যায়-সহ অন্যান্য পদস্থ পুলিশ কর্তা।
বসিরহাট মহকুমার যে ১১টি থানা সীমান্ত নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত, তার মধ্যে রয়েছে স্বরূপনগর, হিঙ্গলগঞ্জ, হেমনগর, সন্দেশখালি, হাসনাবাদ প্রভৃতি। এই সমস্ত থানার উপর সার্বক্ষণিক নজরদারি চালানোর জন্যই এই কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার ডঃ হোসেন মেহেদী রহমান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, “সীমান্ত লাগোয়া থানাগুলি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। অনুপ্রবেশ, চোরাচালান, পাচার বা অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে এই স্মার্ট কন্ট্রোল রুম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি আসন্ন দুর্গাপুজো ও অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”
এই কন্ট্রোল রুম থেকে প্রায় ৩৫ লক্ষ মানুষের উপর সরাসরি নজরদারি সম্ভব হবে। স্থলপথের পাশাপাশি জলপথেও সন্দেহজনক কার্যকলাপের ওপর তৎক্ষণাৎ নজর রাখা যাবে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্দেহজনক নড়াচড়া বা কার্যকলাপ চোখে পড়লে কন্ট্রোল রুম থেকেই সঙ্গে সঙ্গে সতর্কবার্তা পাঠানো হবে সংশ্লিষ্ট থানায়।
এছাড়াও, এই উদ্যোগের ফলে সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবং জেলা পুলিশের মধ্যে সমন্বয় আরও জোরদার হবে। যৌথ অভিযান এবং গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রেও এই কেন্দ্র বিশেষ সহায়ক ভূমিকা নেবে।
নতুন নজরদারি ব্যবস্থাকে ঘিরে সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যেও নিরাপত্তা নিয়ে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, সিসিটিভি নজরদারির ফলে অপরাধ কমবে, সীমান্ত অপরাধীদের দমন সহজ হবে এবং উৎসবের মরসুমেও নাগরিকরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন।
পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “স্মার্ট কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, সীমান্ত ঘাঁটি, জলপথ ও প্রধান রাস্তাগুলি ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে থাকবে। এতে যেকোনও অনুপ্রবেশ বা সন্দেহজনক নড়াচড়া দ্রুত চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।”
আসন্ন দুর্গাপুজোকে সামনে রেখে সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য এই পদক্ষেপকে প্রশাসনিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারি চালিয়ে সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এটি এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আমাদের Google News এ ফলো করুন
২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।
