নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুর: ঘোষিত নির্দিষ্ট দিনে ভোট না হওয়ায় (No Election in Debra) ফের বিতর্কে জড়ালো পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরার রাধামোহনপুর সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি। নির্বাচন স্থগিত হওয়ার কারণ হিসেবে ব্যাঙ্কের তরফে আর্থিক সঙ্কটের কথা বলা হলেও, বিজেপি নেতাদের দাবি—এটা একপ্রকার রাজনৈতিক চক্রান্ত। বিজেপির প্রশ্ন, যখন নির্বাচন সংক্রান্ত সমস্ত প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে, তখন হঠাৎ ভোট বাতিল কেন?
সূত্র অনুযায়ী, এই সমবায় সমিতির নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল গত ২৬ জুন। মনোনয়ন জমা পড়ে ১৪ ও ১৫ জুলাই, এবং ১৮ জুলাই প্রকাশিত হয় চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা। সবকিছু ঠিকঠাক চললেও, ভোটের আগের দিন হঠাৎই ব্যাঙ্ক জানায় যে নির্বাচনের খরচ বহনের মতো পর্যাপ্ত অর্থ নেই, ফলে নির্বাচন আপাতত স্থগিত।
এদিন সকালে ডেবরা ব্লকের রাধামোহনপুরে অবস্থিত সমবায় সমিতির অফিস চত্বর উত্তাল হয়ে ওঠে বিজেপি সমর্থকদের বিক্ষোভে। ‘গণতন্ত্রের অপমান’, ‘চক্রান্ত করে ভোট বন্ধ’, এমন নানা স্লোগানে মুখরিত হয় এলাকা। বিক্ষোভকারীরা অফিস চত্বরে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন এবং সমবায় অফিসের গেটে তালা লাগিয়ে দেন।
বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, এটি সম্পূর্ণভাবে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত। যদি ব্যাঙ্কের কাছে ৫–১০ হাজার টাকার সামান্য নির্বাচন খরচের মতো অর্থ না থাকে, তাহলে কেন আগেই নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করা হলো? কেন মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হলো? কেন তালিকা প্রকাশ হলো? এই সমস্ত প্রশ্ন তুলে বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়েছে, নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করে তা বাতিল করাটা একটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ফল।
ঘটনাস্থলে মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশবাহিনী, যাদের একমাত্র কাজ ছিল উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি।
স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব এই ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের মতে, এইভাবে ভোট বাতিল করাটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা দাবি করেছে, এই বিষয়ে দ্রুত হস্তক্ষেপ করুক রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং পুনরায় ভোটের দিন ঘোষণা করুক।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পশ্চিম মেদিনীপুরের রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধীরা যেমন এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে সরকারকে কাঠগড়ায় তুলছে, তেমনই সাধারণ মানুষও বিস্মিত—মাত্র কয়েক হাজার টাকার অভাবে একটা সমবায় নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া কীভাবে থেমে যায়?
এই ঘটনা শুধু একটা সমবায় সমিতির ভোট বাতিলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে প্রশাসনিক গাফিলতি এবং রাজনৈতিক টানাপোড়েনের এক জটিল ধাঁধা। এখন দেখার, এর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয় এবং আদৌ কি পুনরায় ভোটের দিন ঘোষণা করা হয় কিনা।