সংশোধিত ওয়াকফ আইন (waqf act protest) ঘিরে উত্তেজনার আগুন ছড়াল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে। সোমবার এই আইনবিরোধী আন্দোলনের (waqf act protest) জেরে গোটা এলাকা পরিণত হয় উত্তপ্ত সংঘর্ষস্থলে। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, আগুন, লাঠিচার্জ— একের পর এক ঘটনায় কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা অঞ্চল।
আন্দোলন (waqf act protest) নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকেও নিতে হয় কড়া পদক্ষেপ। এরই মাঝে মঙ্গলবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মোট ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে উত্তর কাশীপুর থানার পুলিশ এবং ১ জনকে গ্রেফতার করেছে চন্দনেশ্বর থানার পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আরও বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। গোটা ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন যথেষ্ট চাপে পড়েছে। সোমবারের সেই অশান্ত মুহূর্তের ভিডিও ও ছবি ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, যা জনমনে আরও আতঙ্ক তৈরি করছে।
ঘটনার সূত্রপাত সোমবার সকালে। আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির ডাকে সংশোধিত ওয়াকফ আইনের(waqf act protest) বিরুদ্ধে এক বিশাল মিছিল আয়োজন করা হয়। ভাঙড় (waqf act protest) ও তার আশপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার সমর্থক ওই মিছিলে যোগ দিতে আসছিলেন। অভিযোগ, সেই সময় পুলিশ তাদের পথ আটকে দেয়। সেখান থেকেই শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি, বচসা এবং পরে তা গড়ায় খোলা সংঘর্ষে।
অভিযোগ, আন্দোলনকারীদের একাংশ উত্তেজিত হয়ে পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, একাধিক মোটরবাইকেও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের উপর ইট-বজ্রি ছোঁড়ার ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দফায় দফায় লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয় পুলিশ। ঘটনার সময় বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে।
ঘটনার পরপরই বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয় ভাঙড়ের বিভিন্ন এলাকায়। শুভঙ্কর সিনহা এবং রূপেশ কুমারের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী পৌঁছয় ঘটকপুকুর এলাকায়। শুরু হয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ধরপাকড়। যাদের বিরুদ্ধে ভিডিও ফুটেজে প্রমাণ মিলেছে, তাদের ধরতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হচ্ছে।
এদিকে আইএসএফ (waqf act protest) এবং তৃণমূল কংগ্রেস একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে দোষারোপের রাজনীতি শুরু করেছে। আইএসএফের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিনা প্ররোচনায় পুলিশ আক্রমণ চালিয়েছে। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে দাবি করা হয়েছে, মিছিলের নামে ভাঙচুর ও হিংসা ছড়ানোই ছিল উদ্দেশ্য।
সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে রাজ্যজুড়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশের অভিযোগ, নতুন এই আইন ওয়াকফ সম্পত্তির উপর সরকারের হস্তক্ষেপ বাড়িয়েছে। এর বিরুদ্ধে আগে থেকেই নানা এলাকায় প্রতিবাদ চলছিল, তবে ভাঙড়ের মতো এতটা বড় আকারে তা সামনে আসেনি।
ভাঙড়ে যে হিংসাত্মক চেহারা নিয়েছে আন্দোলন, তাতে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। এলাকায় এখনও থমথমে পরিবেশ। দোকানপাট আংশিক বন্ধ, রাস্তাঘাটে পুলিশের টহল চলছে নিয়মিত। প্রশাসনের তরফে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানানো হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। পাশাপাশি, ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, তার জন্য কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে গোটা এলাকায়।
এই ঘটনার প্রভাব রাজ্য রাজনীতিতেও পড়েছে। বিরোধীরা পুলিশের ভূমিকাকে কটাক্ষ করেছে, আবার শাসক দল আন্দোলনকারীদের দায়ী করছে। আপাতত ভাঙড়ের মানুষ চাইছেন, পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হোক এবং রাজনীতি নয়, মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হোক।