বন্যার কবলে প্রায় ৩৭ হাজার গ্রামবাসী, মৃত ২

শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: টানা বৃষ্টির ফলে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল এবং চন্দ্রকোনার বিস্তীর্ণ অংশ জলমগ্ন (Flood) হয়ে পড়েছে। নদীর জলস্তর বাড়ার ফলে গ্রাম থেকে…

বন্যার কবলে প্রায় ৩৭ হাজার গ্রামবাসী, মৃত ২

শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: টানা বৃষ্টির ফলে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল এবং চন্দ্রকোনার বিস্তীর্ণ অংশ জলমগ্ন (Flood) হয়ে পড়েছে। নদীর জলস্তর বাড়ার ফলে গ্রাম থেকে শহর— সব জায়গাতেই প্রবল জলবন্দি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ঘাটাল ও চন্দ্রকোনায় যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে নৌকা ও স্পিড বোট। ঘাটালে এখনও পর্যন্ত জল নামার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি।

জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, গোটা জেলায় প্রায় ৩৭ হাজার মানুষ বন্যার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ১২২টি ওয়ার্ড এবং অঞ্চল জলমগ্ন বলে জানা গেছে। যদিও গড়বেতা ১ ও ২ নম্বর ব্লকে জল কিছুটা নামতে শুরু করেছে, কিন্তু চন্দ্রকোনা ও ঘাটালের অবস্থা এখনও ভয়াবহ। আতঙ্ক ছড়িয়েছে দাসপুর এলাকায়, যেখানে নির্মীয়মাণ স্লুইস গেট দিয়ে নদীর জল ঢুকে পড়েছে।

   

দাসপুরের আতঙ্কিত মানুষদের আশ্বস্ত করে কৃষি ও সেচ কর্মাধ্যক্ষ আশিস হুদাইত বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জোয়ারের কারণে জল কিছুটা এগিয়ে এসেছে, কিন্তু আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।” পাশাপাশি, জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরি জানান, “প্রশাসন সমস্তরকম ব্যবস্থা নিচ্ছে। ঘাটাল ও চন্দ্রকোনায় সরকারি নৌকা, স্পিড বোট, সিভিল ডিফেন্স, এনডিআরএফ ও এসডিআরএফ টিম মোতায়েন করা হয়েছে।”

বন্যা দুর্গত মানুষদের ত্রাণ এবং খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। দুর্ভোগের মধ্যে প্রশাসনের একটানা তৎপরতাই কিছুটা স্বস্তি এনে দিচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা. সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, “প্রায় ২৫টি মেডিক্যাল ক্যাম্প চালু করা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা জল পেরিয়ে দুর্গত এলাকায় পৌঁছে প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।”

Advertisements

ঘাটাল শহর ও সংলগ্ন গ্রামের রাস্তাগুলি একপ্রকার জলের নিচে চলে গেছে। স্কুল, দোকানপাট, হাটবাজার—সবই কার্যত বন্ধ। ঘরবন্দি বহু মানুষকে উদ্ধার করে নৌকায় করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রতি বছর বর্ষায় ঘাটাল ও চন্দ্রকোনার এই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। দীর্ঘদিন ধরে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের দাবি ওঠলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে প্রতি বছর এমন দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হয়।

বৃষ্টির দাপটে পশ্চিম মেদিনীপুরের একাধিক ব্লকে এখনও জলমগ্ন অবস্থা। প্রশাসন দ্রুততার সঙ্গে কাজ শুরু করলেও জল নামতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে বলেই অনুমান। আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, নতুন করে বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।