কলকাতার একটি আইন কলেজের প্রাঙ্গণে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় জাতীয় মহিলা কমিশন (NCW) স্বতঃপ্রণোদিতভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই ঘটনায় দুজন বর্তমান ছাত্র এবং একজন প্রাক্তন ছাত্র জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
এনসিডব্লিউ-এর (NCW) চেয়ারপার্সন বিজয়া রাহাতকর কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে চিঠি লিখে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) প্রাসঙ্গিক ধারার অধীনে তাৎক্ষণিক ও সময়োপযোগী তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি ভুক্তভোগীকে সম্পূর্ণ চিকিৎসা, মানসিক এবং আইনি সহায়তার পাশাপাশি ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএসএস)-এর ৩৯৬ ধারার অধীনে ক্ষতিপূরণ প্রদানের উপর জোর দিয়েছেন। কমিশন তিন দিনের মধ্যে বিস্তারিত পদক্ষেপ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে।
ঘটনার বিবরণ
কলকাতার কাসবা (NCW) এলাকায় অবস্থিত একটি আইন কলেজের প্রাঙ্গণে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, গত সপ্তাহে এক ছাত্রী কলেজের ভিতরে দুজন বর্তমান ছাত্র এবং একজন প্রাক্তন ছাত্রের দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হন। এই ঘটনা রাজ্যে নারী নিরাপত্তা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
স্থানীয় পুলিশ ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে এবং অভিযুক্তদের হেফাজতে নিয়েছে। তবে এই ঘটনা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দুর্বলতাকে সামনে এনেছে, যা নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
জাতীয় মহিলা কমিশনের পদক্ষেপ (NCW)
জাতীয় মহিলা কমিশন (NCW) এই ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে। চেয়ারপার্সন বিজয়া রাহাতকর তাঁর চিঠিতে বলেছেন, “এই ধরনের ঘটনা শুধুমাত্র ভুক্তভোগীর জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে না, বরং সমাজে নারীদের নিরাপত্তার প্রতি আস্থার উপরও প্রশ্নচিহ্ন তুলে।” তিনি কলকাতা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার প্রাসঙ্গিক ধারায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এছাড়া, ভুক্তভোগীর জন্য তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সহায়তা, মানসিক পরামর্শ এবং আইনি সহযোগিতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টিও তিনি গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। এনসিডব্লিউ তিন দিনের মধ্যে পুলিশের কাছ থেকে তদন্তের অগ্রগতি এবং পদক্ষেপের বিস্তারিত প্রতিবেদন দাবি করেছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (NCW) বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর এই ধরনের ঘটনাকে ‘ছোটখাটো’ বলে উড়িয়ে দেওয়ার মানসিকতার কারণেই এই ধরনের অপরাধ বাড়ছে।”
তিনি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা (NCW) পরিস্থিতির অবনতির জন্য তৃণমূল সরকারকে দায়ী করেছেন। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, “পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বিজেপি এই ঘটনাকে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে ব্যবহার করছে।” তৃণমূলের এক মুখপাত্র আরও বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময় নারী নিরাপত্তার প্রশ্নে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন।”
জনগণের প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ
এই ঘটনার পর কলকাতায় ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রী সংগঠন, নারী অধিকার সংগঠন এবং সাধারণ নাগরিকরা রাস্তায় নেমে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে মানুষ পুলিশ ও সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এক্স প্ল্যাটফর্মে অনেকে এনসিডব্লিউ-এর পদক্ষেপের প্রশংসা করলেও, কেউ কেউ মনে করছেন যে এই ধরনের ঘটনা রোধে আরও কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োজন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তার প্রশ্ন
এই ঘটনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা (NCW) ব্যবস্থার দুর্বলতাকে সামনে এনেছে। একটি আইন কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানে, যেখানে ভবিষ্যতের আইনজ্ঞরা তৈরি হন, সেখানে এই ধরনের ঘটনা ঘটায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরা দাবি করেছেন যে, কলেজগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা, নিরাপত্তা কর্মী এবং কঠোর প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করা হোক। এক নারী অধিকার কর্মী বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপদ না হলে ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ কীভাবে সুরক্ষিত হবে?”
আধারে মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করতে চান? এই ধাপগুলো অনুসরণ করুন
আইনি ও সামাজিক প্রভাব
জাতীয় মহিলা কমিশনের হস্তক্ষেপ(NCW) এই ঘটনার তদন্তে গতি আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার অধীনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। তবে, এই ধরনের ঘটনা কেবল আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে নয়, সামাজিক সচেতনতা ও শিক্ষার মাধ্যমেও প্রতিরোধ করা প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ভুক্তভোগীর পুনর্বাসন এবং মানসিক সহায়তা নিশ্চিত করাও এখন গুরুত্বপূর্ণ।
কসবার আইন (NCW) কলেজে গণধর্ষণের ঘটনা কেবল একটি অপরাধ নয়, এটি সমাজে নারী নিরাপত্তা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতার প্রতিফলন। জাতীয় মহিলা কমিশনের স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ এবং তদন্তের নির্দেশ এই ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে, এই ধরনের ঘটনা রোধে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, সামাজিক সচেতনতা এবং কঠোর আইনি ব্যবস্থা অপরিহার্য। আগামী দিনে পুলিশের তদন্ত এবং সরকারের পদক্ষেপ এই ঘটনার ন্যায়বিচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।