নন্দীগ্রাম ভোটে মমতা বনাম শুভেন্দু লড়াইয়ের জল্পনা বাড়ছে

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে ইতিমধ্যেই তুমুল রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে রাজ্যজুড়ে। আর সেই লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম (Nandigram Politics)। ২০২১ সালের…

নন্দীগ্রাম ভোটে মমতা বনাম শুভেন্দু লড়াইয়ের জল্পনা বাড়ছে

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে ইতিমধ্যেই তুমুল রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে রাজ্যজুড়ে। আর সেই লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম (Nandigram Politics)। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে এই কেন্দ্রেই হয়েছিল হাই-ভোল্টেজ সংঘর্ষ। শুভেন্দুর কাছে অল্প ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই স্মৃতি এখনও টাটকা নন্দীগ্রামের মানুষের মনে। তাই ২০২৬ সালের ভোটে আবারও কি এই দুই হেভিওয়েট নেতার মধ্যে সরাসরি লড়াই হতে চলেছে, তা নিয়েই শুরু হয়েছে জল্পনা।

বৃহস্পতিবার এই জল্পনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছেন তমলুক সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি প্রলয় পাল। তিনি তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে দাবি করেছেন, “বিশেষ সূত্রে খবর, নন্দীগ্রাম নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি গোপন রিপোর্ট হাতে এসেছে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুনরায় নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হচ্ছেন।” শুধু তাই নয়, প্রলয় পাল চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, “বিজেপি এবারও নন্দীগ্রামে তৃণমূলকে হারাবে।” তাঁর এই দাবি ঘিরে রাজনৈতিক মহলে ইতিমধ্যেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

   

তবে বিজেপির এই দাবিকে সরাসরি খারিজ করেছেন নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ। তিনি বলেন, “তৃণমূলের প্রার্থী কে হবেন, তা যথাসময়ে দলের নেতৃত্ব এবং কর্মীরা জানতে পারবেন। এখনই কোনও কিছু বলা ভুল।” যদিও তিনি ইঙ্গিত দেন যে শুভেন্দু অধিকারী সম্ভবত আগামী বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হবেন না।

বাপ্পাদিত্য গর্গ তাঁর দাবিকে সমর্থন করার জন্য একাধিক তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “শুভেন্দু অধিকারীর নিজের বুথ নন্দনায়েকবাড়ে শেষ কো-অপারেটিভ নির্বাচনে তৃণমূল জিতেছে এবং বিজেপি হেরেছে। সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচনেও নন্দীগ্রামের বহু অঞ্চলে তৃণমূল এগিয়ে ছিল। শুভেন্দুর নিজের এলাকায় তৃণমূল পেয়েছে ৪১২ ভোটের লিড। এছাড়াও শুভেন্দুর প্রভাব বলয় হিসেবে পরিচিত পঞ্চায়েত সমিতির এলাকাতেও লোকসভা ভোটে তৃণমূল ২৫০০ ভোটের লিড পেয়েছে।”

Advertisements

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নন্দীগ্রাম সবসময়ই বাংলার রাজনীতিতে বিশেষ তাৎপর্য বহন করেছে। ২০০৭ সালের কৃষিজমি আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট—প্রতিটি পর্যায়েই নন্দীগ্রাম ছিল রাজ্য রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। মমতা বনাম শুভেন্দু দ্বন্দ্ব কেবল একটি বিধানসভা আসনের লড়াই নয়, এটি দুই রাজনৈতিক শক্তির সম্মান রক্ষার লড়াই। তাই ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগেই এই কেন্দ্র নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠা একেবারেই স্বাভাবিক।

রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, শুভেন্দু অধিকারী বিজেপির রাজ্য রাজনীতির মুখ হলেও নন্দীগ্রামে তাঁর শক্তি যে কিছুটা হলেও কমেছে, তা বিভিন্ন নির্বাচনী ফলাফলে স্পষ্ট। অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি সত্যিই পুনরায় নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হন, তবে সেই লড়াই হবে আরও বেশি হাই-ভোল্টেজ।

তবে আপাতত বিজেপি ও তৃণমূল, দুই দলের নেতারাই সরাসরি মুখ খোলেননি। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উভয় দলই নির্বাচনের কৌশল নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সঠিক সময়ে। কিন্তু তৃণমূল এবং বিজেপি, দুই দলেরই স্থানীয় কর্মীরা ইতিমধ্যেই ময়দানে নেমে প্রচারের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। ফলে ২০২৬ সালের নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে, নন্দীগ্রামের মাটিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা ততই বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।