নদিয়া: অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় দানা (Cyclone Dana) বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়ার ফলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নদিয়া জেলা এবং এর আশেপাশের অঞ্চলে প্রভাব ফেলতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, নদীয়া জেলা প্রশাসন গতকাল থেকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ফেরিঘাট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শান্তিপুরের গুপ্তিপাড়া ফেরিঘাট এবং কালনা নরসিংহপুর ফেরিঘাট বন্ধ থাকবে আগামী ২৫ তারিখ পর্যন্ত। এই সিদ্ধান্তের ফলে, নদীয়া এবং বর্ধমান জেলার মধ্যকার যোগাযোগে কিছুটা বাধা সৃষ্টি হয়েছে, কারণ এই দুটি ঘাটের মাধ্যমে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী পারাপার হয়।
বঙ্গোপসাগরের উপকূলে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় দানা মঙ্গলবার গভীর বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে, এবং এটি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে নদীয়া এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়ার পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উচ্চ জলস্তর এবং প্রবল বাতাসের কারণে নদীর তীরে থাকা যাত্রীদের জন্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
নদীয়া জেলার শান্তিপুর অঞ্চলে গুপ্তিপাড়া ফেরিঘাট একটি অত্যন্ত ব্যস্ত স্থান, যেখানে প্রতিদিন শিক্ষা, ব্যবসা এবং অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য হাজার হাজার লোক যাতায়াত করেন। পাশাপাশি, কালনা নরসিংহপুর ফেরিঘাট বর্ধমান জেলার সাথে সংযোগ স্থাপন করে, যা ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই ফেরিঘাটের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা হয়ে থাকে।
বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে প্রশাসনের নির্দেশে এই ফেরিঘাট দুটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে নদীয়া জেলার ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের বিদ্যালয় এবং কলেজে যাওয়ার জন্য অন্য রাস্তা খুঁজতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষ করে, যারা বর্ধমান জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন, তাদের জন্য এই ফেরিঘাটের উপর নির্ভরশীলতা অত্যন্ত বেশি।
গোটা নদীয়া জেলার মানুষ এই সময়ে নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনা করে আরও কিছু সাবধানতা অবলম্বন করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। প্রশাসন জানিয়েছে যে, গত বছরের দুর্গাপূজার সময়ও নদীতে জলস্তরের বৃদ্ধি ঘটেছিল, ফলে কিছু ঘাট বন্ধ করতে হয়েছিল। এছাড়াও, এই বছরও দুর্গাপূজার আগে বিভিন্ন ব্যারেজ থেকে জল ছাড়া হয়েছে, যার কারণে নদীর জলস্তর বেড়েছে।
নদীয়ার জেলাশাসক বিপ্লব মিত্র বলেন, “আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি। ঘূর্ণিঝড় দানা আমাদের রাজ্যে আছড়ে পড়লে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা যে দুটি ফেরিঘাট বন্ধ করেছি, তা যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য। আমরা আশা করছি যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কমলে দ্রুত ফেরিঘাট দুটি পুনরায় চালু করা হবে।”
এদিকে, নদীয়া জেলার স্থানীয়রা বলেন, “এই সময়ে ফেরিঘাট বন্ধ থাকলে আমাদের সমস্যা হবে। আমাদের অন্যান্য পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে, যা সময়সাপেক্ষ। তবে আমাদের নিরাপত্তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
অন্যদিকে, প্রশাসন কর্তৃক স্থাপিত সতর্কতা ব্যবস্থা ইতিমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে। নদীর পাড়ে নিরাপত্তা কর্মীরা মোতায়েন করা হয়েছে এবং স্থানীয় জনগণের জন্য তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও, আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী দিনগুলোতে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে, যা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদী তীরবর্তী এলাকা নিরাপদ রাখতে স্থানীয় প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। তারা বলছেন, “যদি গাছপালা উপড়ে পড়ে বা নদীর জলস্তর বাড়ে, তাহলে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য এটি বিপজ্জনক হতে পারে। তাই আমরা চাই প্রশাসন যেন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে।”
অতীতের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, নদীয়া জেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় প্রশাসন ও স্থানীয় জনগণের মধ্যে সহযোগিতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মোকাবেলায় প্রশাসন যে সকল প্রস্তুতি নিচ্ছে, তার মধ্যে স্থানীয় সেচ দপ্তরেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তারা জলস্রোত নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে।
নদীয়ার ভেতরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও, সড়ক পথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়বে না বলেই আশা করছেন স্থানীয়রা। তাঁরা বলেন, “যাত্রার সময় যদি সমস্যায় পড়ি, তবে রাস্তাঘাট বন্ধ থাকলে আমাদের ভোগান্তি হবে।”
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, যদি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব শক্তিশালী হয়, তবে নদীয়ার বিভিন্ন স্থানে জরুরী পরিষেবা চালানোর জন্য বিশেষ টিম তৈরি করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, স্থানীয় জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে।
এই অবস্থায়, নদীয়া জেলা প্রশাসনের সঠিক পদক্ষেপগুলো যে কতটা কার্যকরী হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। আসন্ন দানা ঘূর্ণিঝড়ের সময় স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের প্রতি সকলের নজর থাকবে।