আজ, ২৮ জুলাই, রাজ্য রাজনীতিতে ফের একবার উত্তেজনার পারদ চড়ছে ‘নবান্ন অভিযান’কে ঘিরে। রাজ্যের চাকরি প্রার্থীরা, চাকরিজীবী ও চাকরিহারাদের নিয়ে গঠিত “বঞ্চিত চাকরি প্রার্থী, চাকরিজীবী, চাকরিহারা ঐক্য মঞ্চ” এবং “সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ” আজকের এই নবান্ন অভিযান (Nabanna Abhijan) আয়োজন করেছে। উদ্দেশ্য একটাই— রাজ্যের তরফে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিশ্রুত চাকরিগুলির দাবিতে জবাবদিহি চাওয়া এবং ন্যায়ের প্রত্যাশা।
কিন্তু এই আন্দোলনের আগেই পুলিশের বিরুদ্ধে উঠেছে গুরুতর অভিযোগ। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের ভয় দেখাচ্ছে। বলা হচ্ছে, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পথে নামলে আইনি সমস্যায় পড়তে হবে। এই হুঁশিয়ারির মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের মানসিকভাবে দমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে দাবি মঞ্চের প্রতিনিধিদের।
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের এক সদস্য বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রয়োগ করতে চাই। কিন্তু প্রশাসন চাইছে যেন আমরা রাস্তায় না নামি। পুলিশের তরফে আমাদের বলা হয়েছে যে নবান্ন অভিযান করলে আদালতের নির্দেশ ভঙ্গ হবে এবং তার ফল মারাত্মক হতে পারে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, এই ভয় দেখানো সম্পূর্ণ অন্যায় ও অগণতান্ত্রিক।”
এই প্রসঙ্গে আরও এক আন্দোলনকারী বলেন, “যারা বছর পর বছর চাকরি না পেয়ে পথে নেমেছে, তাদের ভয় দেখিয়ে আর দমানো যাবে না। আমরা আইন মেনে প্রতিবাদ করতে চাই। পুলিশকে এভাবে রাজনৈতিক চাপের হাতিয়ার না করাই উচিত।”
অন্যদিকে, পুলিশের তরফে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তাদের দাবি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করাই তাঁদের দায়িত্ব। আদালতের নির্দেশ মেনেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কোনও রকম অহিংস আন্দোলনে বাধা দেওয়া হয়নি। তবে কোনও বিশৃঙ্খলা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন প্যারা-টিচার, গ্রুপ ডি ও গ্রুপ সি চাকরিপ্রার্থী, এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জে নাম থাকা শিক্ষিত বেকার এবং বেশ কিছু চুক্তিভিত্তিক কর্মী। তাঁদের অভিযোগ, বহু বছর ধরে পরীক্ষায় পাশ করেও নিয়োগ পাচ্ছেন না তাঁরা। প্যানেল থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন তাঁদের নিয়োগ করছে না। কোথাও আবার দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা।
আজকের নবান্ন অভিযানে বহু মানুষের জমায়েতের সম্ভাবনা থাকায় শহরের বিভিন্ন প্রান্তে কড়া পুলিশি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কলকাতার প্রবেশদ্বারগুলিতে চলছে তল্লাশি, বহু জায়গায় ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। তবে আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট করে দিয়েছেন— যত বাধাই আসুক, তাঁরা শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পথে তাঁদের দাবি জানাবেন।
এই আন্দোলন যে আগামী দিনে আরও বৃহৎ আকার নেবে, তা মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তাঁদের দাবি, সরকারি নিষ্ক্রিয়তা ও রাজনৈতিক অবহেলা যতদিন থাকবে, ততদিন এই প্রতিবাদ জারি থাকবে। এখন দেখার, প্রশাসন আদৌ এই অভিযোগগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে কি না এবং ভবিষ্যতে কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয় কি না।