মানালী দত্ত, বহরমপুর: নদী সংরক্ষণের বার্তা পৌঁছাতে, মুর্শিদাবাদ জেলা শাসকের নির্দেশে সোমবার বহরমপুরের গঙ্গাঘাটে আয়োজিত হলো “গঙ্গা উৎসব ২০২৪” (Ganga Utsav 2024)। “গঙ্গা পরিষ্কার আমাদের অঙ্গীকার” শীর্ষক এই উৎসবে জোর দেওয়া হয় নদী ও পরিবেশ রক্ষার উদ্দেশ্যে। জেলা গঙ্গা কমিটি মুর্শিদাবাদ এবং উন্নয়ন আধিকারিকের সহায়তায় ও ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা-এর সমর্থনে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়।
এদিন সকালে ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে অঙ্কন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা করা হয়। এই প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা নদী রক্ষার ভাবনা নিয়ে আঁকায় অংশ নেয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সদর বহরমপুরের এসডিও শ্রী শুভংকর রায়, মিউনিসিপ্যাল এফেয়ারস অফিসার শ্রী লিটন সাহা, বহরমপুরের বিডিও শ্রী অমরজ্যোতি সরকার, জেলা প্রজেক্ট অফিসার শ্রীমতী সাত্যকি জানা এবং জয়েন্ট বিডিও শ্রীমতী সালিনী মহাপাত্র। এছাড়াও উৎসবে অংশ নেন শিক্ষার্থীরা, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক এবং অন্যান্য জেলা আধিকারিকরা।
গঙ্গা পরিষ্কার অভিযানে প্রধান প্রতিশ্রুতি
অনুষ্ঠানে জেলা গঙ্গা কমিটি গঙ্গা নদীকে পরিষ্কার ও দূষণমুক্ত রাখার জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা প্রদান করে। নদীতে কোনো ধরনের বর্জ্য না ফেলতে নাগরিকদের সচেতন করা হয়। এই উৎসবের মাধ্যমে পৌরবাসীর কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছানো হয়— “পূজার ফুল, পাতা ও অন্যান্য সামগ্রী যেন নদীর জলে অথবা ঘাটে না ফেলা হয়, বরং নির্দিষ্ট স্থানে জৈব আবর্জনার পাত্রে রাখা হয়।”
প্লাস্টিক, থার্মোকল ও অজৈব বর্জ্যগুলিকেও নদীতে ফেলার পরিবর্তে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রতিমা বিসর্জনের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রতিমার কাঠামো, খড় এবং অন্যান্য সামগ্রী নদী থেকে সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়, যাতে নদীজলে দূষণ না ছড়ায়।
গঙ্গা সুরক্ষায় নির্দেশনা
উৎসবের অন্য এক পর্বে অংশগ্রহণকারীরা শপথ গ্রহণ করেন যে, নদীর গতিপথে কোনো বাধা সৃষ্টি করবেন না এবং নদীর পাড়ে শৌচকর্মে লিপ্ত হবেন না। তারা আরও বলেন, নদীর পাশে বা নদীতে কোনো মৃত প্রাণী, গৃহস্থালি বর্জ্য বা কোনো ধরনের ক্ষতিকারক পদার্থ ফেলা যাবে না, কারণ এগুলি নদীর জলকে দূষিত করে এবং পরিবেশে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে।
অংশগ্রহণকারীরা জনগণকে সচেতন করেন, শৌচকর্মের জন্য সর্বদা শৌচালয় ব্যবহার করা উচিত এবং নদীতে কোনো গৃহস্থালি কার্যকলাপ না করাই উচিত। এতে নদীর জল এবং পরিবেশ পরিষ্কার থাকবে এবং জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে না।
স্থানীয় জনগণ ও প্রশাসনের উৎসাহ
জেলা গঙ্গা কমিটি এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ নেওয়ায় বহরমপুরের নাগরিকরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তারা আশাবাদী যে এই উৎসবটি স্থানীয় জনগণের মধ্যে নদী ও পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াবে।
গঙ্গা নদীর প্রতি আমাদের দায়িত্ব এবং দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানিয়ে শেষ হয় গঙ্গা উৎসব ২০২৪-এর অনুষ্ঠান।