সোনা পাচার করতে গিয়ে বিএসএফের জালে মুর্শিদাবাদের যুবক

সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (Murshidabad) একটি বড় ধরনের সোনার চোরাচালান রুখে দিয়ে দুই চোরাকারবারীকে গ্রেফতার করেছে। নদিয়া জেলার ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে এই অভিযানে ১ কোটি টাকার…

Murshidabad BSF arrest smugglers

সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (Murshidabad) একটি বড় ধরনের সোনার চোরাচালান রুখে দিয়ে দুই চোরাকারবারীকে গ্রেফতার করেছে। নদিয়া জেলার ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে এই অভিযানে ১ কোটি টাকার বেশি মূল্যের সোনা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বিএসএফ-এর দক্ষিণ বঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ১১তম ব্যাটালিয়নের জওয়ানরা নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালনা করে।

গ্রেফতার হওয়া দুই চোরাকারবারী মুর্শিদাবাদ জেলার বাসিন্দা এবং শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন বলে জানা গেছে। তারা সোনা চপ্পলের মধ্যে লুকিয়ে করিমপুর থেকে কৃষ্ণনগরগামী একটি বাসে পরিবহন করছিলেন।বিএসএফ-এর একজন সিনিয়র আধিকারিক জানিয়েছেন, “বিজয়মঠ সীমান্ত ফাঁড়িতে মোতায়েন ১১তম ব্যাটালিয়নের জওয়ানরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে একটি বিশেষ দল গঠন করে।

   

মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে মহিষবাথান এলাকায় গোয়েন্দা তথ্যে উল্লেখিত একটি বাসকে লক্ষ্য করা হয়। জওয়ানরা বাসটি তাড়া করে থামায় এবং তল্লাশি চালিয়ে দুই চোরাকারবারীর চপ্পলের গহ্বরে লুকানো সাতটি সোনার টুকরো জব্দ করে।”

বাজেয়াপ্ত হওয়া সোনার ওজন ১০৩০.৭২ গ্রাম এবং এর আনুমানিক মূল্য ১,০৫,৭৫,১৮৭ টাকা। এছাড়াও, দুটি মোবাইল ফোনও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তদের বিজয়মঠ সীমান্ত ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চোরাকারবারীরা জানিয়েছেন, তারা মুর্শিদাবাদের জলঙ্গীতে এক ব্যক্তির কাছ থেকে সোনা নিয়েছিল এবং এটি কৃষ্ণনগর বাস স্ট্যান্ডে একজনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। এই কাজের জন্য তাদের আর্থিক ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। বিএসএফ জানিয়েছে, অভিযুক্তরা এবং বাজেয়াপ্ত হওয়া সোনা ও মোবাইল ফোনগুলো পরবর্তী আইনি ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এই ঘটনা বিএসএফ-এর সাম্প্রতিক সময়ে সোনার চোরাচালান রোধে তৃতীয় সাফল্য। গত কয়েক দিনে পশ্চিমবঙ্গের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে একাধিক চোরাচালানের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করা হয়েছে। বিএসএফ-এর একজন মুখপাত্র বলেন, “আমাদের জওয়ানদের নিরলস প্রচেষ্টা এবং নিষ্ঠার কারণে এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে।

আমরা সীমান্তবর্তী জনগণের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, সোনার চোরাচালান সম্পর্কিত কোনো তথ্য ‘সীমা সাথী’ হেল্পলাইন নম্বর ১৪৪১৯-এ অথবা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ৯৯০৩৪৭২২২৭-এ ভয়েস বা টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে জানান। বিশ্বাসযোগ্য তথ্য প্রদানকারীদের পুরস্কৃত করা হবে এবং তাদের পরিচয় গোপন রাখা হবে।”

Advertisements

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে সোনার চোরাচালান একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিএসএফ-এর দক্ষিণ বঙ্গ ফ্রন্টিয়ার ১৭০.৪৮ কেজি সোনা এবং ১৫৯ কেজি রুপো বাজেয়াপ্ত করেছে, যার মূল্য প্রায় ১২০ কোটি টাকা।

এই অভিযানে ১০৫টি সোনার চোরাচালানের ঘটনায় ৮৬ জন ভারতীয় এবং ৩২ জন বাংলাদেশি চোরাকারবারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চোরাকারবারীরা সোনা লুকানোর জন্য বিভিন্ন উদ্ভাবনী পদ্ধতি ব্যবহার করে, যেমন গাড়ির গহ্বর, জুতার তল, কৃষি যন্ত্রপাতি এবং এমনকি সোনাকে পেস্ট আকারে রূপান্তরিত করা।

এই ঘটনা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরেছে। বিএসএফ-এর দক্ষিণ বঙ্গ ফ্রন্টিয়ার দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ এবং মালদা জেলায় ৯০০ কিলোমিটারের বেশি আন্তর্জাতিক সীমান্ত পাহারা দেয়। এই অঞ্চলে চোরাচালান রোধে বিএসএফ-এর নজরদারি এবং গোয়েন্দা তৎপরতা ক্রমশ জোরদার হচ্ছে।

হিন্দুস্থান গ্লাস অধিগ্রহণে ছাড়পত্র পেল ইনডিপেন্ডেন্ট সুগার কর্পোরেশন

এই গ্রেফতার এবং বাজেয়াপ্ত সোনা ভারতের অর্থনীতির উপর চোরাচালানের প্রভাব কমাতে বিএসএফ-এর প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে বিএসএফ আশাবাদী। এই ঘটনা সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।