মুর্শিদাবাদ হিংসা “রাজ্য স্পন্সর”, কলকাতায় দাঁড়িয়ে মমতাকে চ্যালেঞ্জ অমিতের

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ (amit-shah) আজ নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামের বিজেপির বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। তিনি মমতাকে মুসলিম ভোটব্যাঙ্ককে তুষ্ট করার…

amit-shah slams mamata on murshidabad issue

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ (amit-shah) আজ নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামের বিজেপির বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। তিনি মমতাকে মুসলিম ভোটব্যাঙ্ককে তুষ্ট করার জন্য অপারেশন সিঁদুর এবং ওয়াকফ (সংশোধন) আইনের বিরোধিতা করার অভিযোগে “নিম্নমানের রাজনীতি” করার অভিযোগ করেছেন।

এছাড়া, তিনি মুর্শিদাবাদে এপ্রিলে ঘটে যাওয়া হিংসা কে “রাজ্য স্পন্সর” বলে অভিযোগ করেছেন। কলকাতায় বিজেপি নেতা ও কর্মীদের উদ্দেশে ভাষণে শাহ আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, “২০২৬ সালের পর মমতা দিদি আর মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন না।”

   

অপারেশন সিঁদুর বিরোধিতার সমালোচনা

শাহ (amit-shah) অভিযোগ করেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুসলিম ভোটব্যাঙ্ককে তুষ্ট করার জন্য অপারেশন সিঁদুরের বিরোধিতা করেছেন, যা ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার প্রতিক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের সামরিক অভিযান। তিনি বলেন, “অপারেশন সিঁদুরের বিরোধিতা করে মমতা দিদি দেশের মা-বোনদের অপমান করেছেন।

এটি কেবল সামরিক অভিযানের বিরোধিতা নয়, কোটি কোটি মা-বোনদের জীবন নিয়ে খেলা। আমি বাংলার নারীদের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, আগামী নির্বাচনে অপারেশন সিঁদুর বিরোধীদের সিঁদুরের মূল্য বোঝান।” শাহ আরও বলেন,পহেলগাঁওয়ে বাংলার পর্যটকদের হত্যার সময় মমতা নীরব ছিলেন, কিন্তু এখন তিনি জঙ্গিদের মৃত্যুতে ব্যথিত। তিনি দাবি করেন, এই অভিযানে পাকিস্তানের ১০০ কিলোমিটার গভীরে জঙ্গিদের ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে।

মুর্শিদাবাদ দাঙ্গা: রাষ্ট্র-স্পন্সর অভিযোগ

শাহ (amit-shah) অভিযোগ করেছেন, এপ্রিলে মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ (সংশোধন) আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় সংঘটিত দাঙ্গায় তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা জড়িত ছিলেন। তিনি বলেন, “একজন তৃণমূল মন্ত্রী দাঙ্গাকে উসকে দেওয়ায় এটি রাজ্য-স্পন্সর ছিল।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মুর্শিদাবাদে বিএসএফ মোতায়েনের জন্য বারবার অনুরোধ করলেও তৃণমূল সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে।

তিনি বলেন, “বিএসএফ মোতায়েন করা হলে হিন্দুদের সুরক্ষা দেওয়া যেত। বিজেপি কর্মীদের হাইকোর্টে যাওয়ার পরই বিএসএফ মোতায়েন করা হয়।” এই দাঙ্গায় কমপক্ষে তিনজন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন।

মুর্শিদাবাদের দাঙ্গা এপ্রিলে ওয়াকফ (সংশোধন) আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় শুরু হয়, যার ফলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ, লুটপাট এবং হিন্দু পরিবারগুলির বাড়িঘর ধ্বংস হয়। বিজেপি নেতা অমিত মালব্য দাবি করেছেন, হিন্দু পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করে আক্রমণ করা হয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই দাঙ্গার জন্য বাইরে থেকে উসকানিদাতাদের দায়ী করেছেন এবং বলেছেন, তিনি এই আইন বাংলায় কার্যকর করবেন না।

আপনি কি জানেন ভারতে CISF সেনারা কোথায় মোতায়েন থাকে

অনুপ্রবেশ ও জাতীয় নিরাপত্তা(amit-shah)

শাহ (amit-shah) মমতার নেতৃত্বাধীন সরকারের উপর জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান না নেওয়ার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, “মমতা দিদি বাংলার সীমান্ত বাংলাদেশিদের জন্য খোলা রেখেছেন। তাঁর আশীর্বাদে অনুপ্রবেশ চলছে। কেবল বিজেপি সরকারই এটি বন্ধ করতে পারে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, তৃণমূল সরকার বিএসএফ-কে প্রয়োজনীয় জমি দেয়নি, যার ফলে অনুপ্রবেশ বন্ধ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, “তৃণমূল ক্ষমতায় থাকার জন্য অনুপ্রবেশ চালিয়ে যেতে চায়।”

Advertisements

ওয়াকফ (সংশোধন) আইন

শাহ (amit-shah)মমতার ওয়াকফ (সংশোধন) আইন বিরোধিতাকে তুষ্টিকরণের রাজনীতি হিসেবে সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “ওয়াকফ আইনে কি ভুল আছে? বাংলার জমি কি ওয়াকফের জন্য উৎসর্গ করতে হবে? মমতা কার পক্ষে এই আইনের বিরোধিতা করছেন?” তিনি দাবি করেন, মমতা ২০২৬ সাল পর্যন্ত এই আইনের বিরোধিতা করতে পারেন, কারণ তারপর তিনি আর ক্ষমতায় থাকবেন না। মমতা এর আগে বলেছেন, তিনি বাংলায় এই আইন কার্যকর করবেন না এবং বিক্ষোভকারীদের দিল্লিতে প্রতিবাদ করতে বলেছেন।

শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতি

শাহ(amit-shah) তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলে বলেন, “কলকাতার বাজারে যুবকদের চাকরি বিক্রি হচ্ছে। তৃণমূল নেতাদের বাড়ি থেকে এত টাকা জব্দ হয়েছে যে গণনার মেশিন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। এই দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, মমতার শাসনে বাংলা অনুপ্রবেশ, দুর্নীতি, নারীদের উপর অত্যাচার, অপরাধ, বোমা বিস্ফোরণ এবং হিন্দুদের প্রতি অবিচারের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

শাহের (amit-shah)এই সফর মুর্শিদাবাদ দাঙ্গার পর প্রথম এবং ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির প্রচারণার একটি অংশ। তিনি বলেন, “২০২৬ সালের নির্বাচন শুধু বাংলার ভবিষ্যৎ নয়, দেশের নিরাপত্তার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি মমতাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, “হিংসা ছাড়া নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দেখান, আপনার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।” বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার বলেন, শাহের এই সফর দলের তৃণমূল স্তরে প্রচারণাকে শক্তিশালী করবে এবং “অপারেশন বাংলা” শুরু করবে।

মমতার প্রতিক্রিয়া

মমতা এর আগে অপারেশন সিঁদুরকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের জন্য বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অভিযুক্ত করেছেন। তিনি বলেন, কেন্দ্র ইচ্ছাকৃতভাবে এই অভিযানের নাম “সিন্দুর” রেখেছে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে।

মুর্শিদাবাদ দাঙ্গার পর তিনি দাবি করেন, বাইরের উসকানিদাতারা এই হিংসার জন্য দায়ী, এবং তিনি কোনো সম্প্রদায়কে দোষারোপ করতে চান না। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ১.২০ লক্ষ টাকার চেক বিতরণ করেছেন এবং নতুন উপ-বিভাগ গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন।

অমিত শাহের (amit-shah) এই বক্তৃতা ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়েছে। তাঁর অভিযোগ এবং তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। মুর্শিদাবাদ দাঙ্গা, ওয়াকফ আইন এবং অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বিতর্ক আগামী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।