Murshidabad Violence Linked to Deep Conspiracy, Shocking Details Emerge in Probe
পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ (murshidabad) জেলায় সম্প্রতি ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের নামে সংঘটিত হিংসার পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র উন্মোচিত হয়েছে। তদন্তে জানা গেছে, এই সহিংসতা কেবল স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ ছিল না, বরং পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি এবং হিন্দু সম্প্রদায়কে ভীতসন্ত্রস্ত করার একটি উদ্দেশ্যমূলক প্রচেষ্টা ছিল।
এই ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, শতাধিক আহত হয়েছেন এবং শয়ে শয়ে হিন্দু পরিবার পালিয়ে মালদহের বৈষ্ণবনগরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী এখন এই ষড়যন্ত্রের মূল কারিগরদের খুঁজে বের করতে তৎপর।
হিংসার প্রেক্ষাপট
গত ৮ এপ্রিল মুর্শিদাবাদের (murshidabad) জঙ্গিপুর, সুতি এবং শমশেরগঞ্জ এলাকায় ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে শান্তিপূর্ণ বলে মনে হলেও, বিক্ষোভ দ্রুত সহিংস হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের উপর পাথর ছুঁড়তে শুরু করে, যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং রাস্তা অবরোধ করে। এই ঘটনায় তিনজন নিহত হন, এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী (সিএপিএফ) মোতায়েন করা হয়। পুলিশ এখন পর্যন্ত ১৫০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে।
তদন্তে উঠে এসেছে
তদন্তে উঠে এসেছে যে, এই সহিংসতা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। স্থানীয় পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, কিছু বহিরাগত শক্তি এই হিংসার ঘটনাকে উসকে দিয়েছে। বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ অভিযোগ করেছেন, “মুর্শিদাবাদ (murshidabad) জেলাকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিচ্ছিন্ন করার একটি গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। হিন্দু-বহুল এলাকাগুলোতে পরিকল্পিতভাবে সহিংসতা সংঘটিত হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, রাজ্য পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এই ষড়যন্ত্রকে উৎসাহিত করছে।
ষড়যন্ত্রের সূত্র
তদন্তকারী সংস্থাগুলো জানিয়েছে, সহিংসতার পিছনে স্থানীয় এবং সম্ভবত বৈদেশিক উপাদান জড়িত থাকতে পারে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশী সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে এই ঘটনার যোগসূত্র থাকতে পারে। একটি পোস্টে দাবি করা হয়েছে, মুর্শিদাবাদে ৪০টিরও বেশি বাংলাদেশী সন্ত্রাসী সক্রিয় ছিল, যারা ওয়াকফ আইনের সমর্থনের নামে হিন্দুদের উপর হামলার পরিকল্পনা করেছিল। যদিও এই তথ্যের সত্যতা পুলিশ এখনও নিশ্চিত করেনি, তবে তদন্তে এই দিকটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এছাড়া, সহিংসতার সময় হিন্দুদের দোকান লুটপাট, মন্দির ভাঙচুর এবং বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনাগুলো পরিকল্পিতভাবে হিন্দু সম্প্রদায়কে ভীত করে তাদের পলায়নের জন্য চাপ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে, ধুলিয়ান এলাকা থেকে শতাধিক হিন্দু পরিবার নদী পার করে মালদহের দেওনাপুর-শোভাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে।
হায়দরাবাদে কামিন্সদের হোটেলে অগ্নিকাণ্ড, নিরাপদে সানরাইজার্সের খেলোয়াড়রা
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া (murshidabad)
এই সহিংসতা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিজেপি অভিযোগ করেছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোষণ নীতি এই সহিংসতাকে উৎসাহিত করেছে। বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ আবারও আগুনের লেলিহান শিখায় জ্বলছে। মুর্শিদাবাদে (murshidabad) সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে।” তিনি দাবি করেন, ওয়াকফ আইনের বিরোধিতার নামে পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়েছে।
অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সহিংসতার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করে বলেছেন, “ওয়াকফ আইন কেন্দ্রের তৈরি। আমরা এটি সমর্থন করি না এবং রাজ্যে কার্যকর করব না।” তিনি শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে, বিজেপি নেতারা তাঁর এই বক্তব্যকে “দায় এড়ানোর প্রচেষ্টা” বলে সমালোচনা করেছেন।
তদন্তে নতুন তথ্য
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সহিংসতার সময় কিছু ব্যক্তি স্থানীয় জনতাকে উসকানোর জন্য মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছিল। ওয়াকফ আইনকে “ধর্মের উপর হামলা” হিসেবে প্রচার করে কিছু গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। এছাড়া, কিছু গ্রেপ্তার ব্যক্তির কাছ থেকে অস্ত্র এবং উসকানিমূলক উপকরণ উদ্ধার হয়েছে, যা এই ঘটনার পরিকল্পিত প্রকৃতির ইঙ্গিত দেয়।
কিছু সূত্র দাবি করেছে, নিষিদ্ধ সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার (পিএফআই) একটি শাখা এসডিপিআই এই সহিংসতায় জড়িত ছিল। এই সংগঠন কথিতভাবে ওয়াকফ আইনের নামে মানুষকে উসকে দিয়েছে। তবে, পুলিশ এই দাবির সত্যতা যাচাই করছে এবং এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
জনমনে প্রভাব
মুর্শিদাবাদের এই সহিংসতা স্থানীয় জনগণের মধ্যে ভয় এবং অনিশ্চয়তা ছড়িয়েছে। হিন্দু পরিবারগুলোর পলায়ন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। স্থানীয় বাসিন্দা রামেশ্বর মণ্ডল বলেন, “আমরা শান্তিতে থাকতে চাই, কিন্তু এই হামলার পর আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে ভয় হচ্ছে।” অনেকে মনে করছেন, এই ঘটনা রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার একটি প্রচেষ্টা।
সরকারি পদক্ষেপ
কেন্দ্রীয় গৃহসচিবের নির্দেশে মুর্শিদাবাদে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) ৩০০ জনের পাশাপাশি অতিরিক্ত পাঁচটি কোম্পানি মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করছে। কলকাতা হাইকোর্ট এই ঘটনার তদন্তের জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে।
মুর্শিদাবাদের সহিংসতা শুধু একটি আইনশৃঙ্খলার সমস্যা নয়, বরং এটি রাজ্যের সামাজিক এবং রাজনৈতিক গতিশীলতার উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। তদন্তে ষড়যন্ত্রের যেসব সুতো উঠে এসেছে, তা রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনরুদ্ধার এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া এখন জরুরি।