আবাস যোজনার ঘর বিতরণে দুর্নীতি, বঞ্চনার অভিযোগে উত্তাল মুর্শিদাবাদ

মানালী দত্ত, বহরমপুর: আবাস যোজনার ঘর পাওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ (Corruption in Housing Scheme) নতুন কিছু নয়। মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি প্রকল্পে প্রাপকদের তালিকা…

Murshidabad Residents Protest Alleged Corruption in Housing Scheme

মানালী দত্ত, বহরমপুর: আবাস যোজনার ঘর পাওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ (Corruption in Housing Scheme) নতুন কিছু নয়। মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি প্রকল্পে প্রাপকদের তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া, অনুপযুক্তদের অন্তর্ভুক্ত করা, এবং অবৈধভাবে অর্থের বিনিময়ে তালিকাভুক্তির মতো অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে প্রকৃত প্রাপকেরা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের প্রাপ্য থেকে। এবারে ঘর প্রাপকদের ন্যায্যতার দাবিতে সরব হয়েছে ডোমকল ব্লকের ধুলাউড়ি ও ঘোড়ামারা গ্রাম পঞ্চায়েতের সাধারণ মানুষ।

সম্প্রতি ডোমকল ব্লকের ধুলাউড়ি ও ঘোড়ামারা পঞ্চায়েতের অনেক বাসিন্দা এই বিষয়ে অভিযোগ জানাতে ব্লক অফিসে জড়ো হয়েছিলেন। তাদের দাবি, আবাস যোজনার তালিকায় অনেকের নাম থাকা সত্ত্বেও তাদের নাম কেটে ফেলা হয়েছে, অথচ যাদের ইতোমধ্যেই পাকা বাড়ি রয়েছে তারাই পাচ্ছে এই ঘর।

   

ঘোড়ামারা ১০ নম্বর অঞ্চলের ২৭৩ নাম্বার বুথের কংগ্রেসের সদস্যা আমিনা বিবি এই সমস্যা নিয়ে সরাসরি অভিযোগ জানাতে বিডিও অফিসে এসেছিলেন। তিনি জানান, “আমার অঞ্চলের যারা আমাকে ভোট দিয়ে জিতিয়েছে, তারা কয়েকদিন ধরে আমার বাড়িতে এসে অভিযোগ করছে। তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও তাদের নাম কেটে দেওয়া হচ্ছে, অথচ যাদের পাকা বাড়ি আছে, তারা তাদের কাঁচা হেসেল দেখিয়ে নাম তুলছে তালিকায়।”

নাম বাদ পড়ার অভিযোগে সরাসরি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তির অভিযোগ
আমিনা বিবি আরও বলেন, “আমি কংগ্রেসের সদস্যা, শাসক দলের সদস্য নই। ফলে আমার এলাকায় শাসক দলের অসাধু কর্মকর্তাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ এই প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।” সরকারি নীতির এমন অপব্যবহারে এবং দুর্নীতিতে বিরক্ত ও হতাশ হয়ে পড়েছেন এলাকার দরিদ্র মানুষজন, যাদের প্রাপ্য আবাস যোজনার ঘর। তারা দাবি করছেন, প্রকৃত প্রাপকদের বাদ দিয়ে শাসক দলের পক্ষপাতের ফলেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে মমিনপুরের বাসিন্দা মেরিনা বিবি বলেন, “আমার স্বামী বাইরে কাজ করেন। আমাদের বাড়ি টালির ছাউনিতে ঢাকা। লিস্টে আমার নাম থাকার পরেও যারা সার্ভে করতে আসে, তারা জানায় আমাদের নাম নেই। এর আগে বহুবার আবেদন করেও কোনো কাজ হয়নি।”

অভিযোগ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
বস্তুত, আবাস যোজনার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রকল্পকে নিয়ে এতবার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সাধারণ মানুষদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। প্রকৃত সুবিধাভোগী গরিব মানুষজনের জন্য এই প্রকল্প বরাদ্দ করা হলেও, দুর্নীতি এবং পক্ষপাতের কারণে প্রকৃত প্রাপকদের বঞ্চিত করার অভিযোগ ক্রমশ বাড়ছে। সরকার যদিও বলেছে, প্রকৃত প্রাপকদের নিশ্চিত করতে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে একটি সার্ভে চালু করা হয়েছে, তবে এই সার্ভের নামেও নানা অপব্যবহারের অভিযোগ সামনে এসেছে।

এবার সরকারের তরফে কর্মকর্তাদের সার্ভে কাজের জন্য পাঠানো হলেও, সে সম্পর্কেও অভিযোগ উঠছে। এলাকাবাসীরা জানাচ্ছেন, সার্ভে করার সময় কর্মকর্তারা পক্ষপাতিত্বের মাধ্যমে নির্দিষ্ট মানুষদের নাম রেখে প্রকৃত দরিদ্রদের নাম বাদ দিয়ে দিচ্ছেন। ফলে, সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে ব্লক অফিসে বিক্ষোভ দেখিয়েছে এবং তাদের প্রাপ্য সরকারি সাহায্যের জন্য আওয়াজ তুলেছে।

সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া এবং রাজনীতির ছাপ
গ্রামবাসীদের মধ্যে অসন্তোষ এবং হতাশা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। তারা মনে করছেন, তাদের ন্যায্য দাবিকে পদে পদে পদদলিত করা হচ্ছে। শাসক দলের ক্ষমতাবান নেতারা এবং তাদের সমর্থকরা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে প্রকৃত দরিদ্রদের অধিকারকে কেড়ে নিচ্ছে, ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারের প্রতি অনাস্থা জন্মাচ্ছে।

সরকারের তরফে প্রকৃত প্রাপকদের তালিকাভুক্ত করতে প্রয়োজনে পুনঃসার্ভে করা হতে পারে বলে একটি নির্দেশ জারি হলেও, তা কতটা কার্যকর হবে সে নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহ থেকে গেছে। এই দুর্নীতির ঘটনায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে, সরকারের পক্ষ থেকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে বলে দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা।

অবশেষে বলা যায়, এই ঘটনা শুধুমাত্র মুর্শিদাবাদের ধুলাউড়ি বা ঘোড়ামারার গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে আবাস যোজনা প্রকল্পে এমন অভিযোগ প্রতিনিয়ত সামনে আসছে। প্রকৃত প্রাপক এবং দরিদ্র মানুষদের ন্যায্য অধিকার সুরক্ষিত করতে এ ধরনের প্রকল্পে স্বচ্ছতা আনতে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন।