মুর্শিদাবাদ: বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মুর্শিদাবাদের একাধিক এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভুয়ো আধার কার্ড (Fake Aadhaar Card) তৈরির অভিযোগ উঠছিল। স্থানীয় সূত্র এবং প্রশাসনিক রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের নাগরিকরা অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে এইসব চক্রের মাধ্যমে আধার কার্ড সংগ্রহ করছিলেন। এই নথি ব্যবহার করে তারা ভোটার কার্ড, রেশন কার্ডসহ বিভিন্ন সরকারি সুবিধা গ্রহণের পাশাপাশি দেশে দীর্ঘসময় অবৈধভাবে অবস্থান করছিলেন। এবার মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের উদ্যোগে বড়সড় অভিযান চালিয়ে ধরা পড়ল সেই চক্রের মূল সদস্যরা।
মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অন্তর্গত রানিনগর, সাগরপাড়া এবং জলঙ্গি থানা এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। অভিযানে মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রানিনগর থানার এলাকায় আবু সুফিয়ান, রফিকুল ইসলাম এবং জামালউদ্দিন শেখ নামে তিনজনকে পাকড়াও করা হয়। অন্যদিকে, পুরনো একটি মামলায় ধৃত গাফফার আলিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সাব্বির আহমেদ নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর চলতি মাসের ৭ তারিখ জলঙ্গি থানার এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাহাবুল ইসলাম নামে আরও একজনকে আটক করা হয়।
অভিযান চলাকালীন পুলিশের হাতে বিপুল পরিমাণ প্রমাণও উঠে এসেছে। পাঁচটি ল্যাপটপ, তিনটি প্রিন্টার মেশিন, পাঁচটি রেটিনা স্ক্যানিং মেশিন, তিনটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেশিন, একটি রাবার তৈরি ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেশিন এবং একটি ওয়েব ক্যামেরা উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও, ধৃতদের কাছ থেকে প্রচুর ভুয়ো আধার কার্ড উদ্ধার হয়েছে, যা ইতিমধ্যেই ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই চক্রের সদস্যরা অত্যন্ত কৌশলে কাজ করত। সীমান্তবর্তী গ্রাম এবং বাজার এলাকাগুলিতে তারা এমন বাংলাদেশি নাগরিকদের খুঁজে বের করত, যারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে বসবাস করছেন বা কাজের উদ্দেশ্যে সীমান্ত পেরিয়ে এসেছেন। এরপর নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে আধার কার্ড তৈরি করে দেওয়া হতো। শুধু আধার নয়, একবার আধার তৈরি হয়ে গেলে ভোটার কার্ড ও রেশন কার্ড করিয়ে দেওয়ারও ব্যবস্থা করত চক্রটি। ফলে এইসব বাংলাদেশি নাগরিকরা সহজেই ভারতীয় নাগরিক সেজে যাবতীয় সুবিধা গ্রহণ করতে পারতেন।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে সীমান্তবর্তী এলাকায় ভুয়ো ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড মুড়িমুড়ির মতো তৈরি হচ্ছে। তাদের দাবি, এর ফলে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে সরকারি ব্যর্থতা প্রকট হয়ে উঠছে।
মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের এক সিনিয়র অফিসার জানিয়েছেন—
“আমরা ধৃতদের কাস্টডিতে নিয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এই চক্রের সঙ্গে আর কে কে যুক্ত রয়েছে, সেই বিষয়ে তদন্ত চলছে। সীমান্তের নিরাপত্তা বজায় রাখতে এবং নথি জালিয়াতি রুখতে ভবিষ্যতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রশাসনিক মহল মনে করছে, এই অভিযানের ফলে সীমান্তবর্তী এলাকায় ভুয়ো নথি তৈরির এক বড় চক্র ভেঙে দেওয়া সম্ভব হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিচ্ছেন যে, শুধু গ্রেফতার করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। সীমান্তে নজরদারি, স্থানীয় প্রশাসনের সক্রিয়তা এবং আধার কার্ড যাচাই প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তিগত কড়াকড়ি আনতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা যায়।