শিয়ালদহ রেলওয়ে স্টেশন,(Sealdah Station) অন্যতম ব্যস্ততম রেল স্টেশনগুলির মধ্যে একটি। এই স্টেশন ই শুক্রবার দুপুরে একটি উদ্বেগজনক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে। মহরম উপলক্ষে জমায়েত হওয়া কিছু ব্যক্তির তরোয়াল নিয়ে দাপাদাপির ঘটনায় একজন যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন। তার সঙ্গে স্টেশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উঠেছে গুরুতর প্রশ্ন ।
এই ঘটনা শিয়ালদহ (Sealdah Station) স্টেশনের ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঘটে, যখন ডাউন নৈহাটি লোকাল ট্রেনটি দুপুর ১২টায় পৌঁছয় এবং পরবর্তীতে আপ কৃষ্ণনগর লোকাল হিসেবে ছাড়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়। একজন নিত্যযাত্রীর বর্ণনা অনুযায়ী, তিনি নৈহাটি লোকালের শেষ কামরায় ছিলেন। শিয়ালদহ স্টেশনে নামার পর তিনি দেখেন ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম লোকে লোকারণ্য।
এই জমায়েতের অধিকাংশই সম্ভবত মহরম উপলক্ষে কৃষ্ণনগর লোকালে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ, প্ল্যাটফর্মের সামনের দিকে মানুষের মধ্যে ছোটাছুটি ও চিৎকার শুরু হয়। ভিড় ঠেলে এগোতেই তিনি দেখেন, কিছু যুবক খোলা তরোয়াল হাতে উদ্ভ্রান্তের মতো দাপাদাপি করছে।
ভিড়ের মধ্যে এক নিত্যযাত্রী যুবক মাথায় হাত দিয়ে প্ল্যাটফর্মে লুটিয়ে পড়েন। তাঁর মাথা ফেটে প্রচুর রক্তপাত হচ্ছিল। আহত যুবকের দিদি, (Sealdah Station) তৎক্ষণাৎ জলের বোতল থেকে তাঁর মাথায় জল ঢালতে শুরু করেন। নিত্যযাত্রী ও অন্যান্যরা তাঁদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন। জানা যায়, আহত যুবক ও তাঁর দিদি কৃষ্ণনগর লোকালে যাওয়ার জন্য প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছিলেন।
ভিড়ের মধ্যে তরোয়াল চালানোর ফলে তাঁর মাথায় সরাসরি আঘাত লাগে, এবং সেই যাত্রী গুরুতরভাবে আহত হন(Sealdah Station)। ঘটনার পর কিছু নিত্যযাত্রী দ্রুত স্টেশনের গভর্নমেন্ট রেলওয়ে পুলিশ (GRP) কার্যালয়ে ছুটে যান। জনগণের সম্মিলিত প্রতিবাদের মুখে জিআরপি-র কয়েকজন কর্মকর্তা অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঘটনাস্থলে আসেন।
যাত্রীরা তাঁদের কৃষ্ণনগর (Sealdah Station) লোকালের কামরাগুলি দেখিয়ে জানান যে সেখানে তরোয়ালধারী ব্যক্তিরা রয়েছেন। পুলিশ কিছু তরোয়াল উদ্ধার করে, কিন্তু ট্রেনের ভিতরের যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার করে জানান, “ সিটের নিচে আরও তরোয়াল রয়েছে।” তবে, জিআরপি-র কর্মকর্তারা মাত্র চার-পাঁচটি তরোয়াল উদ্ধার করে দ্রুত ট্রেনটি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
প্ল্যাটফর্মে উপস্থিত যাত্রী ও ট্রেনের ভিতরের লোকজন বারবার চিৎকার করে ট্রেন থামানোর অনুরোধ করেন, সতর্ক করে বলেন যে ট্রেনের ভিতরে আরও তরোয়াল রয়েছে, যা পরবর্তীতে মারাত্মক ঘটনার কারণ হতে পারে। কিন্তু তাঁদের কথায় কান না দিয়ে ট্রেনটি ছেড়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনা জিআরপি-র ভূমিকা এবং স্টেশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
শিয়ালদহ রেলওয়ে (Sealdah Station) স্টেশন ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেল স্টেশন, যেখানে প্রতিদিন প্রায় ১৫ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেন। এটি কলকাতার শহরতলির রেল পরিষেবার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র এবং পূর্ব রেলওয়ের প্রধান টার্মিনালগুলির মধ্যে একটি। এই স্টেশনে ২১টি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যার মধ্যে মেইন, উত্তর এবং দক্ষিণ শাখার প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। স্টেশনটি সিসিটিভি ক্যামেরা, লিফট এবং চলমান সিঁড়ি দিয়ে সজ্জিত হলেও, এই ঘটনা নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি প্রকাশ করেছে।
মহরম, ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য শোকের মাস, এবছরে ৬ জুলাই পালিত হবে। ভারতে, মসজিদ-এ-নাখোদা মারকাযী রুইয়াতে-হিলাল কমিটি ঘোষণা করেছে যে মহরম ৫ জুলাই শনিবার জাগরণ রাত হিসেবে পালিত হবে। এই উপলক্ষে শিয়ালদহ স্টেশনে জমায়েত বাড়ে, কিন্তু তরোয়াল নিয়ে দাপাদাপির মতো ঘটনা এই ধর্মীয় সমাবেশের পবিত্রতাকে কলঙ্কিত করেছে।
এই ঘটনা স্থানীয় যাত্রীদের (Sealdah Station) মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। একজন নিত্যযাত্রী বলেন, “শিয়ালদহের মতো সুরক্ষিত স্টেশনে যদি খোলা তরোয়াল নিয়ে এমন ঘটনা ঘটে, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? আজ তরোয়াল, কাল গুলি বা বোমা—আমরা কীভাবে নিরাপদে যাতায়াত করব?” এই ঘটনা স্টেশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং জিআরপি-র তৎপরতার অভাব নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
কর্তৃপক্ষের ভূমিকাজিআরপি-র দ্রুত ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, ট্রেনে আরও তরোয়াল থাকতে পারে, যা ভবিষ্যতে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। রেল কর্তৃপক্ষ এখনও এই ঘটনা সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে, শিয়ালদহ স্টেশনে অতীতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং রোহিঙ্গা গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটলেও, এই ঘটনা নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকে আরও স্পষ্ট করেছে।
শিয়ালদহ স্টেশনে (Sealdah Station) মহরম উপলক্ষে তরোয়াল নিয়ে দাপাদাপির ঘটনা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় সমাবেশের শান্তি নষ্ট করেনি, বরং দেশের অন্যতম ব্যস্ত স্টেশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করেছে।
বিশ্বের ৫টি সবচেয়ে বিপজ্জনক ফাইটার হেলিকপ্টার, শত্রুরা কেবল গর্জন শুনেই ভয় পেয়ে যায়
এই ঘটনা রেল কর্তৃপক্ষ এবং জিআরপি-কে আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টি করেছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্টেশনে সিসিটিভি, ধাতব শনাক্তকারী যন্ত্র এবং নিয়মিত পুলিশ টহল জোরদার করা অত্যন্ত জরুরি।