দীর্ঘ ৬ মাস পর ভারতে (India) ফিরল (Returns) মিতালী এক্সপ্রেস(Mitali Express), যা ভারত-বাংলাদেশের (Bangladesh) মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন হিসেবে পরিচিত। গত মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ি স্টেশনে ফিরে আসে এই ফাঁকা ট্রেনটি। গত ১৭ জুলাই ছিল মিতালী এক্সপ্রেসের শেষ যাত্রা, তারপর থেকেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ট্রেনটি আর চলাচল করেনি। বিশেষ করে, কট্টরপন্থী মৌলবাদীদের তাণ্ডব এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার কারণে ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে এবার, দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর মিতালী এক্সপ্রেস আবার ভারতে ফিরে এসেছে, যা ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মিতালী এক্সপ্রেস বাংলাদেশের চিলাহাটি থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে যাতায়াত করে। ১৭ জুলাই, এই ট্রেনটি শেষবারের মতো হলদিবাড়ি স্টেশন হয়ে বাংলাদেশের চিলাহাটি পৌঁছেছিল এবং তারপর থেকে ঢাকাতেই স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এই ট্রেনের চলাচল বন্ধ ছিল, যার ফলে ভারতীয় যাত্রীরা দীর্ঘ ছয় মাস (6 month) ধরে ট্রেনটি অপেক্ষায় ছিলেন। তবে সোমবার দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হওয়ার পর, মিতালী এক্সপ্রেস ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৫ মিনিটে মিতালী এক্সপ্রেস আবার ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করে এবং হলদিবাড়ি স্টেশনে পৌঁছায়। ট্রেনটি ফাঁকা ছিল, কারণ এটি যাত্রীবিহীন অবস্থায় ফিরেছিল। ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ট্রেনের বগিগুলিকে হলদিবাড়ি স্টেশনে রেখে দেওয়া হয়েছে, তবে ইঞ্জিনটি আবার বাংলাদেশে ফিরে গিয়েছে। স্টেশন মাস্টার সত্যজিৎ তেওয়ারি বলেন, “মিতালী এক্সপ্রেস ১৭ জুলাই শেষবার গিয়েছিল, তারপর আর ফেরেনি। আজ সকালে ৯টা ৫ মিনিটে ট্রেনটি ফিরে এসেছে। আপাতত ট্রেনটি চলাচল করবে না। পরবর্তী সময়ে কী হবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে আমরা ট্রেনটি খতিয়ে দেখেছি, বগির কোনো ক্ষতি হয়নি।”
এদিকে, ট্রেনের ফিরে আসার পর হলদিবাড়ি স্টেশনে স্থানীয় জনগণের মধ্যে এক ধরনের আনন্দ উদ্যাপন দেখা যায়। মিতালী এক্সপ্রেস ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। এটি দুই দেশের মধ্যে পরিবহন ও বাণিজ্যের উন্নতির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিনিময়ের সেতুবন্ধনও সৃষ্টি করে। এই ট্রেনটির চলাচল আবার শুরু হওয়ায় দুই দেশের সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মিতালী এক্সপ্রেসে সাধারণত ব্যবসায়ী, পর্যটক, এবং বিভিন্ন কাজে যাতায়াতকারী যাত্রীরা বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে চলাচল করেন। এই ট্রেনের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়, বিশেষত ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সাংস্কৃতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে। গত ৬ মাসে এই সেবা বন্ধ থাকায়, উভয় দেশের মধ্যে যোগাযোগ কিছুটা কমে গিয়েছিল। তবে, মিতালী এক্সপ্রেসের ফিরে আসা এক নতুন আশার সঞ্চার করেছে, যা দুই দেশের মধ্যে পুনরায় সম্পর্ক জোরদার করতে সাহায্য করবে।
অন্যদিকে, ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মিতালী এক্সপ্রেসের বগিগুলির পুরোপুরি পরীক্ষা করা হয়েছে এবং কোনও ক্ষতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে ট্রেনটি আরও নিরাপদভাবে চলাচল করতে পারে। তবে, এটি স্পষ্ট যে, এখনও পর্যন্ত মিতালী এক্সপ্রেসের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। পরে এই ট্রেনের পুনরায় চালু হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এই ঘটনা দুই দেশের জনগণের মধ্যে নানা ধরনের আলোচনা শুরু করেছে। একদিকে, মিতালী এক্সপ্রেসের ফিরে আসা দুই দেশের সম্পর্কের এক নতুন দিক উন্মোচন করছে, অন্যদিকে, সীমান্তে রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে পুরো ব্যাপারটি কিছুটা সন্দেহের মধ্যে পড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি রাজনৈতিক অস্থিরতা কমে এবং দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়, তাহলে মিতালী এক্সপ্রেস আবার নিয়মিত চলাচল করতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের জন্য এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হতে পারে। ৬ মাস পর মিতালী এক্সপ্রেস ফিরে আসার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হতে পারে, যা ভবিষ্যতে আরও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের পথপ্রশস্ত করবে।