মিনার্ভা থিয়েটারের (Minerva Theatre) মুকুটে নয়া পালক। ১৮৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত উত্তর কলকাতার বিডন স্ট্রিটে অবস্থিত মিনার্ভা থিয়েটারকে ‘ব্লু প্লেক’ (Blue Plaque) তকমা । আধুনিক বাংলা থিয়েটারের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী মিনার্ভা থিয়েটার। ১৩২ বছরের পুরনো এই থিয়েটারটি সম্প্রতি কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (KMC) হেরিটেজ কমিটির পক্ষ থেকে ব্লু পেক তকমা পেয়েছে। ব্লু পেক সম্মান সেই সমস্ত স্থাপত্যকে দেওয়া হয় যাদের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক মূল্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিনার্ভা থিয়েটারও এই সম্মান পেয়ে বাংলা থিয়েটারের ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে।
মিনার্ভা থিয়েটারের (Minerva Theatre) সেক্রেটারি, অনুপ গায়েন টাইমস অফ ইন্ডিয়া-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “মিনার্ভা থিয়েটার বাংলা শিল্পের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই থিয়েটারে একাধিক নাট্যশিল্পী যেমন গিরিশ চন্দ্র ঘোষ, শিশির কুমার ভাদুড়ি, উৎপল দত্ত এবং উত্তম কুমার কাজ করেছেন, যা বাংলা থিয়েটারের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আমরা খুবই আনন্দিত যে সরকার এই থিয়েটারকে ঐতিহাসিক স্থাপত্য হিসেবে গণ্য করেছে।”
১৮৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই থিয়েটারটি বাংলা নাটকের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নরেন্দ্র ভূষণ মুখোপাধ্যায়। ১৮৯৩ সালের ২৮ জানুয়ারি গিরিশ চন্দ্র ঘোষের বিখ্যাত নাটক ‘ম্যাকবেথ’ প্রথম মঞ্চস্থ হয়েছিল এখানে। এটি ছিল বাংলা নাট্যজগতের একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত।
তবে মিনার্ভা থিয়েটারের (Minerva Theatre) ইতিহাস শুধু নাটকেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি বাংলার প্রথম মোশন পিকচারের প্রদর্শনীও ছিল। হীরালাল সেন নির্মিত বাংলার প্রথম মুভি প্রথমবারের জন্য প্রদর্শিত হয়েছিল মিনার্ভা থিয়েটারে। পরবর্তী সময়ে, এই মুভিটি স্টার থিয়েটার এবং ক্লাসিক থিয়েটারেও দেখানো হয়েছিল। এই থিয়েটারটি বাংলা চলচ্চিত্রের প্রাথমিক দিনগুলির অন্যতম কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত।
১৯২২ সালে মিনার্ভা থিয়েটারটি (Minerva Theatre) এক বড় অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়। তবে এটি হার মানেনি। ১৯২৫ সালে, খ্যাতনামা গায়িকা এবং অভিনেত্রী আঙুর বালা দেবীর আর্থিক সহায়তায় থিয়েটারটি পুনর্নির্মিত হয়। তার সহায়তায় এটি নতুন করে জীবন ফিরে পায় এবং আরও শক্তিশালী হয়ে উঠে।
১৯১২ সালে গিরিশ চন্দ্র ঘোষের শেষ নাটক ‘বলিদান’ এই থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয়েছিল, যা বাংলা থিয়েটারের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাটক হিসেবে বিবেচিত হয়। মিনার্ভা থিয়েটারের মাধ্যমে গিরিশ চন্দ্র ঘোষের নাটকগুলি বাংলা নাট্যকলার পরিধিকে আরও বিস্তৃত করেছে ।
‘ব্লু পেক’ (Blue Plaque) তকমা পাওয়ার মাধ্যমে মিনার্ভা থিয়েটার (Minerva Theatre) আরও একবার বাংলা সংস্কৃতির প্রতি তার অবদান প্রমাণ করল। এই থিয়েটারটি শুধু একটি নাট্যশালা নয়, এটি কলকাতার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।