‘বাংলার বাইরে সমস্যায় পড়া শ্রমিকরা রোহিঙ্গা’, দাবি শমীকের

পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা ও রাজ্যের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য (Shamik) বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে একটি বিস্ফোরক দাবি করে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের সূচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ…

Shamik claims migrants rohinga

পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা ও রাজ্যের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য (Shamik) বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে একটি বিস্ফোরক দাবি করে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের সূচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালি শ্রমিক হিসেবে যারা সমস্যার মুখে পড়ছেন, তারা প্রকৃতপক্ষে বাংলার বাসিন্দা নয়, বরং অবৈধ বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী।

শমীক (Shamik) দাবি করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘প্রত্যক্ষ আশীর্বাদে’ বারাসত, বসিরহাট, ডোমকল, ভাঙড়, মেটিয়াবুরুজ-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এই অনুপ্রবেশকারীরা আশ্রয় পেয়েছে। এই অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে এবং রাজ্যের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিচয় নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে।

   

শমীক ভট্টাচার্যের অভিযোগ (Shamik)

শমীক ভট্টাচার্য (Shamik) একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “বাংলার শ্রমিক বলে যারা রাজস্থান, মহারাষ্ট্র বা উত্তরপ্রদেশে সমস্যার মুখে পড়ছেন, তারা বেশিরভাগই অবৈধ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তাদের ভোটব্যাঙ্কের জন্য আশ্রয় দিয়েছে।”

তিনি দাবি করেছেন যে বারাসত, বসিরহাট, ডোমকল, ভাঙড় এবং মেটিয়াবুরুজের মতো এলাকায় এই অনুপ্রবেশকারীরা অবৈধ পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে কাজ করতে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, “এই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা বাংলার শ্রমিকদের বদনাম করছে। মমতা সরকার তাদের রক্ষা করছে, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।”

শমীকের (Shamik) অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে সম্প্রতি রাজস্থানে উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের ৩০০ জনেরও বেশি শ্রমিকের আটকের ঘটনা। এই শ্রমিকদের ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে আটক করা হয়েছিল। শমীক (Shamik) বলেন, “এই শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী। তৃণমূল সরকার তাদের আধার কার্ড, ভোটার কার্ডের মতো জাল পরিচয়পত্র সরবরাহ করেছে।”

তিনি দাবি করেছেন যে কেন্দ্রীয় সরকার এই ঘটনার তদন্ত করছে এবং শীঘ্রই সত্য প্রকাশ পাবে। শমীক আর ও বলেন “যে রাজ্যের দেড় কোটি লোক রাজ্যের বাইরে কাজ করে সেই রাজ্যের সরকারের লজ্জা হওয়া উচিত। কর্ম সংস্থানের অভাব রাজ্যের যুব সমাজ কে বাংলার বাইরে যেতে বাধ্য করছে। উচ্চ শিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ার রা মাত্র ১৮০০০ টাকায় চাকরি করছেন।”

তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া

তৃণমূল কগ্রেস এই অভিযোগের তীব্র নিন্দা করেছে। তৃণমূলের তরফ থেকে বলা হয়েছে , “শমীক ভট্টাচার্যের (Shamik) এই বক্তব্য বাংলার শ্রমিকদের অপমান। আমাদের শ্রমিকরা ভারতীয় নাগরিক, তাদের আধার, প্যান এবং ভোটার কার্ড আছে। শুধু বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য তাদের বাংলাদেশি বলা হচ্ছে।

বিজেপি বাঙালি সংস্কৃতির উপর আক্রমণ করছে।”মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, “বাংলায় দেড় কোটি ভিনরাজ্যের শ্রমিক কাজ করছেন। আমরা কখনো তাদের সঙ্গে বৈষম্য করি না। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি আমাদের শ্রমিকদের উপর অত্যাচার করছে।” তৃণমূল নেতা কুনাল ঘোষ শমীকের দাবিকে ‘বিষাক্ত রাজনীতি’ বলে সমালোচনা করেছেন।

Advertisements

তিনি বলেন, “বিজেপি শ্রমিকদের ভাষার ভিত্তিতে বিভাজন করছে। এই অভিযোগ মিথ্যা এবং জাতীয় ঐক্যের বিরুদ্ধে।” তৃণমূল দাবি করেছে, রাজস্থানে আটক শ্রমিকদের মুক্তির জন্য রাজ্য সরকার কাজ করছে এবং তাদের সবাই বাংলার বৈধ বাসিন্দা।

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট

শমীক ভট্টাচার্যের (Shamik) এই দাবি বাংলার রাজনৈতিক মেরুকরণকে আরও তীব্র করেছে। বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে তৃণমূল সরকার অবৈধ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দিচ্ছে। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “বাংলা এখন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয়স্থল। মমতা সরকার তাদের ভোটব্যাঙ্কের জন্য জাল পরিচয়পত্র দিচ্ছে।” তিনি দাবি করেছেন, বারাসত, বসিরহাট ও ভাঙড়ের মতো এলাকায় এই অনুপ্রবেশকারীদের ঘাঁটি গড়ে উঠেছে।

অন্যদিকে, তৃণমূলের নেতারা বলছেন, বিজেপি এই অভিযোগের মাধ্যমে বাঙালি শ্রমিকদের অপমান করছে এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টি করছে। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, “বিজেপি বাংলার মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের শ্রমিকরা কঠোর পরিশ্রম করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। তাদের বাংলাদেশি বলা অগ্রহণযোগ্য।”

অনুপ্রবেশ নিয়ে পুরনো বিতর্ক

বাংলায় অবৈধ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছে। ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ভারতে প্রায় ২ কোটি অবৈধ বাংলাদেশি রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পশ্চিমবঙ্গে। বিজেপি দাবি করে, তৃণমূল এই অনুপ্রবেশকারীদের ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করছে। তবে, তৃণমূল এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, এটি বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অংশ।

বিশ্বায়নের ভারতে ক্রমশ বাড়ছে বাঘের সংখ্যা

শ্রমিকদের সমস্যা

রাজস্থানে ইটাহারের শ্রমিকদের আটকের ঘটনায় তৃণমূল সরকার তাদের মুক্তির জন্য কাজ শুরু করেছে। পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদ রাজস্থান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তবে, শমীকের (Shamik) দাবি শ্রমিকদের পরিচয় নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে। একজন শ্রমিক, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বলেন, “আমরা বাংলার মানুষ। আমাদের সব পরিচয়পত্র আছে। তবুও আমাদের বাংলাদেশি বলা হচ্ছে। এটা অপমানজনক।”

শমীক ভট্টাচার্যের (Shamik) এই দাবি বাংলার রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তৃণমূল এটিকে বাঙালি শ্রমিকদের অপমান হিসেবে দেখছে, আর বিজেপি এটিকে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন হিসেবে তুলে ধরছে। রাজস্থানে আটক শ্রমিকদের ঘটনা এবং অনুপ্রবেশ নিয়ে অভিযোগ ভারতের ফেডারেল কাঠামো ও আঞ্চলিক ঐক্যের প্রশ্ন তুলেছে। এই বিতর্কের মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত করা এখন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।