Sunday, December 7, 2025
HomeWest Bengalতেল আভিভে সাইরেন বাজতেই বাঙ্কারে ছুটলেন অনিরুদ্ধ বেরা

তেল আভিভে সাইরেন বাজতেই বাঙ্কারে ছুটলেন অনিরুদ্ধ বেরা

- Advertisement -

শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: তীব্র যুদ্ধ আতঙ্কে কাঁপছে গোটা ইজ়রায়েল। ইরান-ইজ়রায়েলের (Israel-Iran) সাম্প্রতিক সংঘাতে জর্জরিত তেল আভিভ শহর। আর সেখানেই গবেষণার কাজে রয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনির যুবক অনিরুদ্ধ বেরা। বুধবার রাতে নিজের আবাসন থেকে মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলার সময় আচমকাই সাইরেন বেজে ওঠে।

“সাইরেন বাজছে! আমাকে এখনই বাঙ্কারে যেতে হবে!” —এই কথাগুলি বলেই দ্রুত কলে ইতি টেনে বাঙ্কারের দিকে ছুটলেন অনিরুদ্ধ। এমনই রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বহু প্রবাসী ভারতীয়ের মধ্যে একজন, মেদিনীপুরের অনিরুদ্ধ।

   

২৭ বছরের অনিরুদ্ধ ২০২২ সালের নভেম্বর মাস থেকে তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ক্যান্সার বায়োফিজিক্স’ নিয়ে গবেষণার কাজে নিযুক্ত রয়েছেন। গবেষণারত অবস্থায় সেখানে অবস্থান করছেন তিনি ও আরও বহু আন্তর্জাতিক গবেষক। তেল আভিভ শহরের কেন্দ্রে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন একটি বহুতল আবাসনে এককভাবে থাকেন অনিরুদ্ধ।

বুধবার রাতে পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় তিনি জানান, “শুক্রবার থেকে তেল আভিভে কার্ফু জারি হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গবেষণাগার বন্ধ রাখা হয়েছে। সকালবেলা নির্দিষ্ট সময়ে কিছু দোকানপাট খুলছে ঠিকই, কিন্তু দিনের বাকি সময় আতঙ্ক আর সাইরেনের ভয়ে ঘরেই থাকতে হচ্ছে।”

অনিরুদ্ধ বলেন, “সাধারণত আমরা নিজেরাই রান্না করে খাই। কিন্তু এখন পরিস্থিতি এতটাই অস্থির যে রান্না করা প্রায় অসম্ভব। তাই রেডিমেড খাবার, শুকনো খাবার, ও মজুতকৃত সামগ্রী দিয়েই কোনওক্রমে চলতে হচ্ছে।”

দিনে প্রায় তিন থেকে চারবার সাইরেন বাজছে বলে জানিয়েছেন অনিরুদ্ধ। তখনই সবাইকে কাছাকাছি বাঙ্কারে ঢুকে পড়তে বলা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ইজ়রায়েল সরকার সমস্ত নাগরিকদের বাঙ্কার বা নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার অনুশাসন দিয়েছে।

তবে আশার কথা, বুধবার সকালে খবর এসেছে যে বৃহস্পতিবার থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে। যদিও সেই সম্ভাবনাও বুধবার রাতের পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে।

অনিরুদ্ধ বলেন, “আমার এখনই বাড়ি ফেরার পরিকল্পনা ছিল না। গবেষণার একটা গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় চলছে। তবে পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হয়, আর ভারত সরকার যদি উদ্ধার মিশন শুরু করে, তাহলে আমি দেশে ফিরে আসব।”

ইতিমধ্যেই ভারত সরকার ইজ়রায়েলে আটকে পড়া ভারতীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। পরিস্থিতি নজরে রেখে দূতাবাসের তরফে ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি অঞ্চলে অনিরুদ্ধের বাড়িতে এখন উদ্বেগের ছায়া। ছেলে যাতে নিরাপদে দেশে ফিরে আসতে পারে, সেই প্রার্থনাতেই দিন গুনছেন অনিরুদ্ধের বাবা-মা।

বাড়ির তরফে জানানো হয়েছে, “আমরা প্রতিদিন একবার করে কথা বলার চেষ্টা করি। কিন্তু ও যেভাবে হঠাৎ করে সাইরেনের সময় ফোন কেটে দিল, তখনই বুক কেঁপে উঠল। এখন শুধু চাই, সরকার যেন যত দ্রুত সম্ভব ওদের উদ্ধার করে।”

যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে গবেষণার কাজে থাকা এমন বহু ভারতীয়ের মধ্যে অনিরুদ্ধের অভিজ্ঞতা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, বিজ্ঞানের যাত্রা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে আন্তর্জাতিক রাজনীতির জটিলতায়।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular