মেমারিতে বসেই ‘প্রেমের ফাঁদ’! কী ভাবে পাক এজেন্টদের জালে জড়াত সেনা জওয়ানরা?

কলকাতা: পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থেকে ধৃত দুই যুবক পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রেখে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তায় বড়সড় ফাঁক তৈরি করেছিল৷ চাঞ্চল্যকর অভিযোগে তাঁদের গ্রেফতার করেছে…

Memari Espionage Arrests

কলকাতা: পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থেকে ধৃত দুই যুবক পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রেখে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তায় বড়সড় ফাঁক তৈরি করেছিল৷ চাঞ্চল্যকর অভিযোগে তাঁদের গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (STF)। জানা গিয়েছে, অভিযুক্তরা নিজেদের ভারতীয় মোবাইল নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপ OTP পাকিস্তানের একটি এনজিও-র সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের হাতে তুলে দিত। আর সেই নম্বরগুলি ব্যবহার করেই সীমান্তের ওপার থেকে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছিল হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট, যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় সেনা আধিকারিকদের টার্গেট করে তথ্য জোগাড় করা- এক কথায়, ‘হানিট্র্যাপ’ অপারেশন।

ধৃত দুই ব্যক্তি

ধৃত দুই ব্যক্তির নাম মুকেশ রজক এবং রাকেশ কুমার গুপ্ত। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁরা শুধুমাত্র নিজেরা নয়, বরং আরও কিছু সঙ্গী-সাথীকে নিয়ে একাধিক জেলার দোকান ঘুরে বেনামে সিম কার্ড সংগ্রহ করতেন। এই সিম কার্ডগুলিই পরে পৌঁছে যেত পাকিস্তানি এজেন্টদের হাতে। এর পর সেই নম্বরগুলিতে খোলা হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট চালানো হত সীমান্তের ওপার থেকে কোনও ভারতীয় নম্বর, অথচ পরিচালনা হচ্ছিল পাকিস্তান থেকে!

   

এসটিএফ-এর তরফে জানানো হয়েছে, এই ধরনের অ্যাকাউন্টগুলির মাধ্যমে সেনা আধিকারিকদের সঙ্গে ভুয়ো পরিচয়ে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে তাঁদের কাছ থেকে গোপন তথ্য নেওয়ার চেষ্টা চলত। কখনও ‘মহিলা বন্ধু’র পরিচয়ে মেসেজ, কখনও ভিডিও কল, কখনও প্রেমের ফাঁদ এভাবেই চলে আসছিল বিপজ্জনক এক গুপ্তচরচক্র। অনেক সময় পাক গুপ্তচর সংস্থা নিজেদের মহিলা এজেন্টদের দিয়ে চালাত এই অপারেশন। শুধু কথোপকথনেই শেষ নয়, তথ্যের বিনিময়ে টাকার প্রলোভনও দেখানো হত বলে জানা গিয়েছে তদন্তে।

নার্সিংহোম থেকে ছাড়া পেতেই গ্রেফতার Memari Espionage Arrests

এই জটিল চক্রে রাকেশ গুপ্ত যে কতটা গভীরভাবে জড়িত ছিলেন, তা বোঝা যায় তাঁর গ্রেফতারের ধরন দেখেই। জানা গিয়েছে, তিনি একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হার্নিয়ার সমস্যায় ৩০ জুন ভর্তি হন, এবং ৪ জুলাই ছুটি পাওয়ার পর নার্সিংহোমের বাইরে বেরতেই তাঁকে পাকড়াও করে STF। নার্সিংহোম সূত্রে খবর, চিকিৎসার সময় তাঁকে দেখতে নিয়মিত যেতেন এক মহিলা, যিনি তাঁর প্রেমিকা বলেই খবর মিলেছে।

Advertisements

এসটিএফ-এর এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, “ভারতের মোবাইল নম্বর যদি পাকিস্তান থেকে পরিচালিত হয়, তাহলে সেটা শুধু বেআইনি নয়, জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে একেবারে সরাসরি ষড়যন্ত্র। ওই অ্যাকাউন্টগুলি দিয়ে স্প্যাম, সেন্সিটিভ তথ্য পাচার, এমনকি জঙ্গি কার্যকলাপ চালানোও সম্ভব। তাই এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত গুরুতর।”

জোরকদমে চলছে জেরা

তদন্তে আরও কারা জড়িত, বা কতদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে এই চক্র, তা জানতেই এখন জোরকদমে চলছে জেরা। ধৃতদের মোবাইল ফোন, ডিভাইস, সিম কার্ড ইতিমধ্যেই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে ঠিক কতজন ভারতীয় নাগরিকের তথ্য পাকিস্তানের হাতে গিয়েছে, আর কে বা কারা এই গোটা প্রক্রিয়াকে চালনা করছিল।

পাশাপাশি, এই ঘটনার পর রাজ্য ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা গুলিকেও সতর্ক করা হয়েছে। কারণ এই ধরনের তথ্য পাচার কেবল সেনাবাহিনীর নয়, টেলিকম, পরিকাঠামো ও প্রশাসনিক স্তরের নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলতে পারে।