পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে(Medinipur Medical College) স্যালাইন কাণ্ডের পর একের পর এক চিকিৎসককে সাসপেন্ড করার ঘটনা থামছেই না। গত শুক্রবার রাতে আরও এক জুনিয়র চিকিৎসক, সুশান্ত মণ্ডল, যিনি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের পিজিটি (পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইন্টার্ন) হিসেবে কর্মরত ছিলেন, তাকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। এর ফলে স্যালাইন কাণ্ডে মোট সাসপেন্ড হওয়া চিকিৎসকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ জনে।
এখন পর্যন্ত যে ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করা হয়েছিল, তার মধ্যে ৬ জন পিজিটি ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে সুশান্ত মণ্ডলের সাসপেনশন অর্ডার পৌঁছানোর পর সেই সংখ্যাটি বেড়ে গেছে। পরবর্তীতে, ওই সময়ই আরও ৬ জন পিজিটি-র কাছেও সাসপেনশন অর্ডার পৌঁছায়। এই ঘটনায় চিকিৎসক মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বারবার চিকিৎসকদের সাসপেন্ড করা হচ্ছে, যা নিয়ে তারা যথেষ্ট ক্ষুব্ধ এবং দুঃখিত।
সুশান্ত মণ্ডলের সাসপেনশন ও চিকিৎসকদের প্রতিবাদ
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের (Medinipur Medical College) ২য় বর্ষের পিজিটি সুশান্ত মণ্ডলের সাসপেনশন অর্ডার পাওয়ার পর চিকিৎসকদের মধ্যে তীব্র প্রতিবাদ তৈরি হয়েছে। তাদের বক্তব্য, স্যালাইন কাণ্ডে তাদের কোন গাফিলতি ছিল না। তারা দাবি করেছেন, স্যালাইনের সমস্যা ছিল, সুতরাং, তাদের সাসপেন্ড করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তারা আরও বলেছেন, এতবার সাসপেনশন দিয়ে তাদের মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করা হচ্ছে।
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকরা একত্রিত হয়ে হাসপাতালের সুপার, ড. ইন্দ্রনীল সেনের কাছে তাদের ক্ষোভ জানাতে ঘেরাও করেন। তারা নিজেদের দাবি তুলে ধরে বলেন, “আমরা এখানে কোনো অভিভাবক ছাড়া একা। সুপার ইন্দ্রনীল সেন ছাড়া আমাদের আর কেউ নেই, তাই আমরা চাই, এই অবিচারের সমাধান হোক।” তাদের দাবি, সাসপেনশন যেন অবিলম্বে তুলে নেওয়া হয় এবং তারা যে কোনো গাফিলতি বা অপরাধে যুক্ত ছিলেন, এমন কোনো প্রমাণ নেই। এছাড়া, তারা এফআইআর-ও প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
এফআইআর প্রত্যাহারের দাবি
জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ দাবি করেছেন, যে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করা উচিত। তাদের বক্তব্য, স্যালাইনের গোলমাল এবং অন্যান্য কিছু পরিস্থিতির কারণে সমস্যাটি হয়েছিল। এক্ষেত্রে দায়ী করার আগে প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করা উচিত ছিল। তারা বলেন, এইভাবে চিকিৎসকদের শাস্তি দিলে ভবিষ্যতে কোনো জুনিয়র চিকিৎসকই নিজেদের কাজ করতে সাহস পাবেন না।
তাদের ক্ষোভ আরও বাড়ে যখন তারা দেখেন, একজন সিনিয়র চিকিৎসক হিসেবে সুপার ইন্দ্রনীল সেন, স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশ মেনে চলছেন এবং পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কিছুই করছেন না। এটি তাদের জন্য হতাশাজনক এবং ক্ষোভের কারণ।
জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার হাসপাতালে যান
এই পরিস্থিতির মধ্যে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে যান জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার। তিনি হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের অবস্থান জানার চেষ্টা করেন। মজুমদার, জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে পরিস্থিতি বুঝতে চান এবং তাদের দাবি-দাওয়ার কথা শোনেন।
তবে, মজুমদারের বক্তব্য ছিল, যে কোনো সমস্যার সমাধান সুস্থ ও সুষ্ঠু আলোচনা এবং আইন অনুযায়ী করাই সঠিক পন্থা। তিনি আরও বলেন, “জুনিয়র চিকিৎসকরা যদি কোনো অন্যায় না করে থাকেন, তবে তাদের সঠিক সমাধান পাওয়া উচিত।”
বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্য
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের সুপার ড. ইন্দ্রনীল সেন এই পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “এফআইআর ও সাসপেনশন সংক্রান্ত যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশনার ভিত্তিতেই হয়েছে। তবে আমরা এই বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখব।”
তিনি আরও বলেন, “চিকিৎসকরা যদি মনে করেন যে তাদের কোনো দোষ বা গাফিলতি ছিল না, তাহলে তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার হবে এবং যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে আপাতত স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশ মেনে চলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।”
আলোচনা ও তদন্তের প্রয়োজনীয়তা
এখন প্রশ্ন উঠছে, কেন বারবার জুনিয়র চিকিৎসকদের সাসপেন্ড করা হচ্ছে? এবং এর পরিণাম কি হতে পারে? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর পেছনে সঠিক তদন্ত ও আলোচনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গাফিলতি বা ভুল থাকলে, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তবে, একতরফা সিদ্ধান্তে আসা, বিশেষ করে চিকিৎসকসংশ্লিষ্ট মতো একটি পেশাগত সম্প্রদায়কে সাসপেন্ড করার মতো ব্যবস্থা নিতে গেলে তা আরও বিবেচনা সহকারে করা উচিত।
বিশেষত, জুনিয়র চিকিৎসকদের ওপর ক্রমাগত চাপ তৈরি হতে পারে এবং এটি তাদের মানসিক চাপকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। যদি চিকিৎসকরা সঠিক প্রশিক্ষণ ও সহায়তা না পান, তবে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের স্যালাইন কাণ্ডের পর সুশান্ত মণ্ডলের সাসপেনশন ও জুনিয়র চিকিৎসকদের ক্ষোভে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। তারা আরো কিছু দাবি করেছেন, বিশেষত সাসপেনশন তুলে নেওয়ার পাশাপাশি এফআইআর প্রত্যাহার করার। এই পরিস্থিতিতে, স্বাস্থ্য দপ্তর ও মেডিক্যাল কলেজের কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টি পুনরায় পর্যালোচনা করা এবং পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।