বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অশান্তির পেছনে ভারতের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে বলে দাবি করেছেন ভারতের বর্ষীয়ান বাম নেতা মহম্মদ সেলিম (Md Salim)। নিজের ফেসবুক পোস্টে সেলিম উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশ যদি ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়, তাহলে সেটি ভারতের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির জন্যই সুবিধাজনক। কারণ, এটি ভারতকে “হিন্দু রাষ্ট্র” হিসেবে প্রতিষ্ঠার দিকে আরও একধাপ এগিয়ে দেবে। তিনি দাবি করেন, এই উদ্দেশ্যে দুই পক্ষই বিদ্বেষের রাজনীতি করছে।
সেলিমের পোস্টের মূল বক্তব্য
মহম্মদ সেলিম তার পোস্টে লিখেছেন, “৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা করার জন্য লড়াই করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে সেই বাংলাদেশে ধর্মকে হাতিয়ার করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। জামাতে ইসলামি এবং অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো ধর্মের নামে রাজনীতি করে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। আর সেই অস্থিতিশীলতা ব্যবহার করেই ভারতে সংখ্যালঘু বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে।”
তিনি আরও লেখেন, “ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় দেশেই বিদ্বেষের রাজনীতি চলছে। এখানে একদল সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালিয়ে হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা চালিয়ে যাচ্ছে, আর বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রতা ছড়িয়ে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হচ্ছে।”
মুক্তিযুদ্ধ এবং বর্তমান বাংলাদেশ
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা থেকে মুক্ত হয়ে গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের জন্য লড়াই করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জামাতে ইসলামি এবং অন্যান্য কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলো ধর্মের নামে রাজনীতিতে প্রভাব ফেলছে।
সেলিমের মতে, এই পরিস্থিতি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, ভারতের জন্যও ভয়ানক। তিনি বলেন, “যখন বাংলাদেশে ইসলামিক শাসন ব্যবস্থার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়, তখন সেটি ভারতের হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলোর প্রচারণায় পুষ্টি জোগায়। দুই পক্ষই আসলে তাদের নিজ নিজ এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য বিদ্বেষের রাজনীতি ব্যবহার করছে।”
ভারতের ভূমিকা এবং অভিযোগ
সেলিমের অভিযোগ, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার পেছনে ভারতের একটি বিশেষ অংশের প্রত্যক্ষ সমর্থন রয়েছে। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার মাধ্যমে ভারতের কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী তাদের হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছে।
সেলিমের এই বক্তব্য ইতিমধ্যেই দুই দেশের রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। কেউ তার বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন, আবার কেউ এটিকে বিরোধিতা করেছেন। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট, দুই দেশের রাজনীতি এবং সমাজে বিদ্বেষের যে বিষবৃক্ষ দিন দিন শিকড় গেড়ে বসছে, তা সমাধানে দুই দেশকেই একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভারতের ভূমিকা নিয়ে মহম্মদ সেলিমের এই বিস্ফোরক মন্তব্য নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তবে এটি সত্য যে, দুই দেশের রাজনীতি এবং সামাজিক ব্যবস্থায় ধর্মের নামে বিভাজন এবং বিদ্বেষ ছড়ানোর যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা শুধু দুই দেশের নয়, পুরো অঞ্চলের শান্তি এবং স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।
এখন দেখার বিষয়, এই পরিস্থিতি সামাল দিতে দুই দেশের সরকার এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।