কসবা আইন কলেজে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীর গণধর্ষণের ঘটনায় রাজ্যজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তদন্ত যতই গভীরে পৌঁছচ্ছে, ততই সামনে আসছে অভিযুক্তের অতীত অপরাধের তালিকা। কলেজের অস্থায়ী কর্মী তথা বহুল পরিচিত ‘দাদা’ মনোজিত সরকার এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত। তাঁর ঘনিষ্ঠতা তৃণমূল ছাত্রপরিষদের একাধিক নেতার সঙ্গে থাকায়, তার অপকর্ম এতদিন ধামাচাপা পড়ে ছিল বলে অভিযোগ উঠছে।
ধর্ষণে মদতের অভিযোগ কলেজ ছাত্রদের বিরুদ্ধেও
গণধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছে আরও দুই ছাত্র। অভিযোগ, মনোজিতকে ধর্ষণে সহযোগিতা ও মদত দেয় কলেজের এই দুই ছাত্র, যারা কলেজের ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং একাধিকবার অভিযুক্তের পাশে দেখা গেছে।
প্রকাশ্যে এল একাধিক পুরনো অভিযোগপত্র Manojit Sarkar Criminal History
জানা গিয়েছে, এর আগেও নানা কুকীর্তি করেছিলেন মনোজিত ওরফে ম্যাঙ্গে৷ সংবাদমাধ্যমের সামনে এসেছে তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৮ ও ২০২৩ সালে দায়ের হওয়া যৌন হয়রানি ও শ্লীলতাহানির অভিযোগপত্র, যেখানে অন্তত তিনজন ছাত্রী তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছিলেনন। জানা যাচ্ছে, কলেজে তার উপস্থিতিই ছিল ভয়ের কারণ, বিশেষত ছাত্রীদের জন্য।
২০১৮ সালে দুই ছাত্রী যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেন মনোজিতের বিরুদ্ধে। মেডিক্যাল পরীক্ষাও হয় কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে। কিন্তু অজানা কারণে মামলা অগ্রগতি পায়নি। কলেজ কর্তৃপক্ষ পরে তাঁকে চার বছরের জন্য সাসপেন্ড করে, শর্ত ছিল, শুধু পরীক্ষার দিনেই কলেজে প্রবেশাধিকার থাকবে।
সাসপেনশন শেষে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠে অভিযুক্ত
২০২২ সালে তার সাসপেনশন উঠে গেলে, ২০২৩ সাল থেকে সে ফের ‘দাদা’ পরিচয়ে ক্যাম্পাসে ঘোরাফেরা শুরু করে। সেই বছর ২৩ মার্চ ফের এক ছাত্রীকে উত্যক্ত করার অভিযোগ ওঠে। একই বছরে আরও দুটি মারধরের অভিযোগে নাম জড়ায় মনোজিতের৷ একটি কসবা থানায় (১ ডিসেম্বর), অন্যটি টালিগঞ্জ থানায় (৭ সেপ্টেম্বর) দায়ের হয়।
অন্ধকার অতীত: আঙুল কাটা, পালিয়ে যাওয়া, ফের ফিরে আসা
তদন্তে উঠে এসেছে মনোজিত সরকারের আরও বিস্ফোরক অতীত। ২০১২ সালে সাউথ কলকাতা ল কলেজে ভর্তি হলেও, ২০১৩ সালে কালীঘাট থানার অধীনে এক ক্যাটারিং কর্মীর আঙুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এর জেরে কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হয় সে। তিন বছর ওড়িশায় আত্মগোপন করে থাকার পর, ২০১৭ সালে আবার কলেজে রিঅ্যাডমিশন নেয় মনোজিত।
প্রশ্নের মুখে কলেজ প্রশাসন ও রাজনৈতিক প্রভাব
ছাত্রীদের একাংশ এবং অভিভাবকদের প্রশ্ন-একাধিক অপরাধমূলক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে কলেজে ফের সক্রিয় হতে পারল মনোজিত? তৃণমূল ছাত্রনেতাদের আশীর্বাদেই কি এত ‘ছাড়’ পেয়ে এসেছে সে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা শুধুই একটি ধর্ষণের মামলা নয়-এটি রাজনীতির ছত্রছায়ায় প্রতিষ্ঠানে অপরাধপ্রবণতার দীর্ঘ ইতিহাসের একটি বহিঃপ্রকাশ।