কসবা ল কলেজ গণধর্ষণ কাণ্ডে কলেজ পরিদর্শনে মনোজ ভার্মা

কলকাতার দক্ষিণ কলকাতা আইন কলেজে এক প্রথম বর্ষের ছাত্রীর উপর গণধর্ষণের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদের মধ্যে কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ কুমার ভার্মা (Manoj-Verma) শুক্রবার…

Manoj-Verma in kasba

কলকাতার দক্ষিণ কলকাতা আইন কলেজে এক প্রথম বর্ষের ছাত্রীর উপর গণধর্ষণের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদের মধ্যে কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ কুমার ভার্মা (Manoj-Verma) শুক্রবার (২৭ জুন) কলেজ ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন।

এই ঘটনায় তিনজন অভিযুক্ত—কলেজের প্রাক্তন ছাত্র তথা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) দক্ষিণ কলকাতা জেলার সাধারণ সম্পাদক মনোজিৎ মিশ্র, প্রথম বর্ষের ছাত্র জাইব আহমেদ এবং আরেক ছাত্র প্রমিত মুখোপাধ্যায় ওরফে প্রমিত মুখার্জি কে গ্রেফতার করা হয়েছে।

   

গত ২৫ জুন সন্ধ্যা ৭:৩০ থেকে ১০:৫০-এর মধ্যে কলেজের নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষে এই জঘন্য ঘটনা সংঘটিত হয়। পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মার (Manoj-Verma) এই পরিদর্শন এই ঘটনার তদন্তে দ্রুত অগ্রগতি এবং কলেজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।

জিথিন এমএসের সঙ্গে চুক্তি বাড়িয়ে নিল নর্থইস্ট ইউনাইটেড

ঘটনার বিবরণ

ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি ২৫ জুন দুপুর ১২টায় পরীক্ষা-সংক্রান্ত ফর্ম জমা দিতে কলেজে আসেন। তিনি প্রথমে ছাত্র ইউনিয়ন ঘরে অপেক্ষা করছিলেন। পরে মনোজিৎ মিশ্র (Manoj-Verma) কলেজের মূল ফটক বন্ধ করার নির্দেশ দেন এবং তাকে জোর করে নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষে নিয়ে যান।

সেখানে মনোজিৎ তাকে ধর্ষণ করেন, এবং জাইব ও প্রমিত এই অপরাধে সহায়তা করেন। অভিযুক্তরা ঘটনার ভিডিও রেকর্ড করে ভুক্তভোগীকে ব্ল্যাকমেল করেন এবং পরিবার ও বন্ধুদের কাছে ভিডিও প্রকাশের হুমকি দেন। ২৬ জুন কাসবা থানায় অভিযোগ দায়েরের পর পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।

মনোজিৎ ও জাইবকে তালবাগান ক্রসিং-এর কাছ থেকে গ্রেফতার করা হয়, এবং প্রমিতকে শুক্রবার ভোরে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযুক্তদের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে, এবং ফরেনসিক পরীক্ষা চলছে। ভুক্তভোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে (সিএনএমসি) নিয়ে যাওয়া হয়।

মনোজ ভার্মার পরিদর্শন (Manoj-Verma)

কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ কুমার ভার্মা, (Manoj-Verma) যিনি গত ১৭ সেপ্টেম্বর আরজি কর মেডিকেল কলেজ ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সরকারের সিদ্ধান্তে পূর্বতন কমিশনার বিনীত গোয়েলের স্থলাভিষিক্ত হন, শুক্রবার দক্ষিণ কলকাতা আইন কলেজ পরিদর্শন করেন। তিনি অপরাধের স্থান পরিদর্শন করেন এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন।

তিনি কলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বিশেষ করে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং নিরাপত্তারক্ষীদের উপস্থিতি পর্যালোচনা করেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভার্মা কলেজ প্রশাসনকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি কাসবা থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান।

Advertisements

জাতীয় মহিলা কমিশনের হস্তক্ষেপ

জাতীয় মহিলা কমিশন(Manoj-Verma) (এনসিডব্লিউ) এই ঘটনার স্বতঃপ্রণোদিতভাবে নোটিশ নিয়েছে এবং কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মার কাছে তিন দিনের মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

এনসিডব্লিউ চেয়ারপার্সন বিজয়া রাহাতকর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) প্রাসঙ্গিক ধারায় মামলা রুজু করার এবং ভুক্তভোগীকে চিকিৎসা, মানসিক এবং আইনি সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ভুক্তভোগীকে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার (বিএনএসএস) ৩৯৬ ধারা অনুযায়ী উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানেরও আহ্বান জানিয়েছেন।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনা রাজ্যে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিজেপি নেতা অমিত মালবিয়া এবং প্রদীপ ভাণ্ডারী মনোজিৎ মিশ্রের টিএমসি সংশ্লিষ্টতা তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সমালোচনা করেছেন। তারা দাবি করেছেন, “মমতার সরকার ধর্ষকদের পৃষ্ঠপোষকতা করে।”

বিজেপি এই ঘটনাকে আরজি কর মামলার সঙ্গে তুলনা করে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগ তুলেছে। টিএমসি এই ঘটনার নিন্দা করে বলেছে, “তিন অভিযুক্তকেই দ্রুত গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজ্য প্রশাসন ভুক্তভোগীকে সব ধরনের সহায়তা দেবে।” তারা তাদের অপরাজিতা অ্যান্টি-রেপ বিলের পক্ষে সওয়াল করেছে।

কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিতর্কিত মন্তব্য

টিএমসি সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য এই ঘটনায় আরও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, “মেয়েদের বুঝতে হবে তারা কার সঙ্গে চলাফেরা করছে। কলেজের ভিতরে এমন ঘটনায় পুলিশ বা সরকার কী করবে?” এই মন্তব্য ভুক্তভোগীকে দায়ী করার ইঙ্গিত দেয় এবং জনগণের ক্ষোভ বাড়িয়েছে। বিরোধীরা এটিকে “নির্লজ্জ” বলে সমালোচনা করেছে।

জনগণের প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনা এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে সামাজিক মাধ্যমে #JusticeForKasbaVictim হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করছে। আরজি কর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ১০ মাসের মধ্যে এই ঘটনা রাজ্যে নারী নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। ছাত্র সংগঠনগুলো ক্যাম্পাসে সিসিটিভি, নিরাপত্তারক্ষী এবং কঠোর প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছে।

মনোজ ভার্মার (Manoj-Verma) কলেজ পরিদর্শন এবং দ্রুত তদন্তের আশ্বাস এই মামলায় ন্যায়বিচারের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা বাড়িয়েছে। তবে, টিএমসি নেতাদের বিতর্কিত মন্তব্য এবং রাজ্যে বারবার ধর্ষণের ঘটনা সরকারের নারী নিরাপত্তা নীতির দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। তদন্তের ফলাফল এবং অভিযুক্তদের শাস্তি এই মামলার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।