মিলন পণ্ডা, কাঁথি: প্রেমিকার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়ানো দু’বছরের শিশুপুত্রকে গলা কেটে নৃশংসভাবে খুন করেছিল প্রেমিক। সেই ঘটনায় দীর্ঘ ছ’বছর মামলা চলার পর অবশেষে যাবজ্জীবন সাজা (Life Sentence) ঘোষণা করল কাঁথি মহকুমা আদালত।
অপরাধের দায়ে কাঁথির জুনপুট উপকূল থানার শৌলা এলাকার বাসিন্দা অনুপ বর-কে দোষী সাব্যস্ত করেন অতিরিক্ত দায়রা বিচারক (ফাস্টট্র্যাক সেকেন্ড কোর্ট) নুরুজ্জামান আলি।
ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি-শৌলা রাস্তায় মছলন্দপুর এলাকায়। প্রেমিকার দুই বছরের পুত্রসন্তানকে হত্যা করে এবং প্রেমিকাকে খুনের চেষ্টার অভিযোগে অনুপের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২, ৩০৭, ৩২৬ ও ২০১ ধারায় মামলা রুজু করা হয়।
জানা গেছে, সাজাপ্রাপ্ত অনুপ বর মারিশদার বিলাসপুর এলাকায় একটি ইলেকট্রিক দোকানে কাজ করত। সেই সূত্রে পরিচয় হয় মারিশদা থানার ওলমা গ্রামের গৃহবধূ শিবাণী মাইতির সঙ্গে। শিবাণীর স্বামী কর্মসূত্রে ভুবনেশ্বরে থাকতেন। এই সুযোগে শিবাণীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে অনুপের এবং দুজন বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
সমস্যা তৈরি হয় শিবাণীর সন্তানকে নিয়ে। অনুপ চাইত, শিবাণী যেন তার শিশুকে ফেলে তার সঙ্গেই ঘর বাঁধে। কিন্তু মায়ের হৃদয় মেনে নিতে পারেনি সেই প্রস্তাব। এনিয়েই দু’জনের মধ্যে ঘনঘন বিবাদ শুরু হয়।
২০১৯ সালের ২২ আগস্ট, অনুপ এবং শিবাণী তাদের শিশুকে নিয়ে মান্দারমণি বেড়াতে বের হয়। পথেই মছলন্দপুর এলাকায় তুমুল বচসা শুরু হয়। সেই সময় বাইকে বসা অবস্থাতেই অনুপ ছুরি বের করে শিবাণীর গলায় কোপ মারে। প্রাণভয়ে শিবাণী দৌড়ে পালালে অনুপ শিশুটিকে হাত-পা বেঁধে ধারালো ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। এরপর শিশুর নিথর দেহ খালের জলে ফেলে দেয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা চিৎকার শুনে ছুটে আসেন। রক্তাক্ত শিবাণী মাইতিকে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পুলিশ তদন্তে নামে। ওই রাতেই অনুপ বরকে গ্রেফতার করে জুনপুট উপকূল থানার পুলিশ। শিবাণীর মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে খুন ও খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ।
এই মামলায় বিচারক ৩৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। বৃহস্পতিবার কাঁথি আদালতে অভিযুক্ত অনুপ বরকে নিম্নরূপ সাজা ঘোষণা করা হয়—
ধারা ৩২৬: ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ২ হাজার টাকা জরিমানা (অনাদায়ে ২ মাসের জেল)।
ধারা ৩০৭: যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩ হাজার টাকা জরিমানা (অনাদায়ে ৩ মাস)।
ধারা ৩০২: যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা (অনাদায়ে ৫ মাস)।
ধারা ২০১: ৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১ হাজার টাকা জরিমানা (অনাদায়ে ১ মাস)।
মামলার সরকারি আইনজীবী বেণীমাধব বেরা জানান, “এই মামলায় আমরা নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার পেয়েছি। আদালত যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করেছে। ছ’বছরের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে, যা বিচার ব্যবস্থার একটি বড় দৃষ্টান্ত।”
এই ঘটনার রায়ে এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আদালতের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।