আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট তুলে ধরে বিজেপিকে হুঁশিয়ারি মমতার

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্তর্জাতিক (Mamata) মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট তুলে ধরে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষী মানুষের উপর নির্যাতন, উৎপীড়ন এবং অবৈধ নির্বাসনের…

Mamata warnes BJP

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্তর্জাতিক (Mamata) মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট তুলে ধরে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষী মানুষের উপর নির্যাতন, উৎপীড়ন এবং অবৈধ নির্বাসনের ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন।

নিউইয়র্ক-ভিত্তিক এই সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিজেপি সরকার বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষী ভারতীয়দের, বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের, বৈষম্যমূলকভাবে লক্ষ্য করে তাদের অবৈধভাবে বাংলাদেশে নির্বাসন দিচ্ছে।

   

মমতা দাবি করেছেন এই রিপোর্ট তৃণমূল কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের অভিযোগের সমর্থনে প্রমাণ হিসেবে কাজ করছে।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বিবৃতিতে বলেন, “আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এইচআরডব্লিউ-এর রিপোর্ট আমাদের বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করেছে। বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষী ভারতীয়দের, বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের মানুষদের, ইচ্ছাকৃতভাবে নির্যাতন ও বহিষ্কার করা হচ্ছে।”

তিনি এইচআরডব্লিউ-এর এশিয়া পরিচালক এলেইন পিয়ারসনের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, “বিজেপি বাংলাভাষী মানুষদের, এমনকি ভারতীয় নাগরিকদেরও, অবৈধভাবে বহিষ্কার করে বৈষম্যকে উসকে দিচ্ছে। কর্তৃপক্ষের দাবি যে তারা অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করছে, তা অবিশ্বাস্য।”

এইচআরডব্লিউ-এর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, অসম, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা এবং দিল্লির মতো বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এই বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ চলছে।

মমতা এই ঘটনাকে ‘ভাষাগত সন্ত্রাসবাদ’ (লিঙ্গুইস্টিক টেররিজম) হিসেবে অভিহিত করে বলেন, “এটা লজ্জাজনক যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলিও এখন ভারতে এই ধরনের বৈষম্যমূলক কার্যকলাপের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। এই অবৈধ নির্বাসন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।” তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে রাজ্যজুড়ে সাপ্তাহিক বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা করেছেন, যাকে তিনি ‘ভাষা আন্দোলন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

এইচআরডব্লিউ-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের মে মাস থেকে বিজেপি-শাসিত সরকার বাংলাভাষী মুসলিমদের, বিশেষ করে দরিদ্র অভিবাসী শ্রমিকদের, ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশে নির্বাসন দিচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় কোনও সঠিক আইনি পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে না, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং ভারতের সাংবিধানিক গ্যারান্টির লঙ্ঘন।

রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, অসমে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাভাষীদের নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য বৈষম্যমূলক প্রক্রিয়া চলছে, যেখানে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ১৬৫,৯৯২ জনকে ‘অনিয়মিত অভিবাসী’ ঘোষণা করা হয়েছে।

Advertisements

এইচআরডব্লিউ জানিয়েছে, তারা জুন মাসে ১৮ জন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এর মধ্যে এমন ব্যক্তিরাও রয়েছেন, যারা ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ করার পর দেশে ফিরে এসেছেন।

রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়েছে, বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে পুলিশ এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাভাষী মুসলিমদের ধরে নিয়ে তাদের নাগরিকত্ব যাচাই না করেই জোরপূর্বক বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে, আটককৃতদের মারধর করা হয়েছে এবং বন্দুকের মুখে সীমান্ত পার করতে বাধ্য করা হয়েছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনাকে ‘মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, “এই ধরনের কার্যকলাপ ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের পরিপন্থী। বিজেপি তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাভাষীদের উপর এই বৈষম্যমূলক আচরণ চালিয়ে যাচ্ছে।” তিনি দাবি করেছেন, এই নির্বাসনের পিছনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ রয়েছে, যা মে মাসে রাজ্যগুলিকে ৩০ দিনের মধ্যে ‘অবৈধ অভিবাসী’ চিহ্নিত ও নির্বাসনের নির্দেশ দিয়েছিল।

বিজেপি অবশ্য এই অভিযোগের জবাবে দাবি করেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ইস্যুকে ব্যবহার করে ‘অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের’ রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। তারা বলছে, এই অভিযান জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হচ্ছে। তবে, এইচআরডব্লিউ-এর রিপোর্টে এই দাবিকে ‘অবিশ্বাস্য’ বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, এবং বলা হয়েছে যে এই প্রক্রিয়ায় ভারতীয় নাগরিকদেরও নির্বাসন দেওয়া হচ্ছে।

মুম্বাই-পুনে এক্সপ্রেসওয়েতে ২০টি গাড়ির সংঘর্ষ, আহত ১৯

এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়েছে, বিশেষ করে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন। এই ঘটনা ভারতের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News