মমতার ওবিসি সমীক্ষায় প্রকৃত সংখ্যালঘুর অধিকার ক্ষুণ্ন

ওবিসি তালিকা নিয়ে আবার তৃণমূল বিজেপি রাজনৈতিক চাপানউতোর। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির (mamata) নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের তড়িঘড়ি ওবিসি সমীক্ষা এবং আরও কয়েকটি মুসলিম সম্প্রদায়কে…

mamata obc scam

ওবিসি তালিকা নিয়ে আবার তৃণমূল বিজেপি রাজনৈতিক চাপানউতোর। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির (mamata) নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের তড়িঘড়ি ওবিসি সমীক্ষা এবং আরও কয়েকটি মুসলিম সম্প্রদায়কে ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এই পদক্ষেপকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং মরিয়া প্রচেষ্টা হিসেবে সমালোচনা করেছে বিজেপি।

বিজেপির অভিযোগ , (mamata) এই তালিকার স্বেচ্ছাচারী সম্প্রসারণে কোনও যোগ্যতা বা পদ্ধতিগত কঠোরতার অভাব রয়েছে, যা প্রকৃত হিন্দু ওবিসি সম্প্রদায়ের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করছে। জাতীয় পশ্চাদপদ শ্রেণি কমিশন (এনসিবিসি) এই জরিপ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং এই সম্প্রসারণের ন্যায্যতা সম্পর্কিত তথ্য চেয়েছে।

   

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ বিষয়ে অস্বচ্ছ এবং উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে টালবাহানা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অস্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, রাজ্য সরকার কী লুকাতে চাইছে?

ওবিসি তালিকার সম্প্রসারণ এবং বিতর্ক

পশ্চিমবঙ্গ সরকার (mamata) সম্প্রতি রাজ্যের ওবিসি তালিকায় আরও কিছু মুসলিম সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক তোষণ নীতির অংশ হিসেবে দেখছে বিরোধীরা, বিশেষ করে আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে। সমালোচকদের মতে, এই তড়িঘড়ি পদক্ষেপের পিছনে কোনও বিজ্ঞানসম্মত জরিপ বা সামাজিক-অর্থনৈতিক তথ্যভিত্তিক যুক্তি নেই। এটি কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ভোট আকর্ষণের প্রচেষ্টা বলে মনে করছে বিরোধীরা।

এই সম্প্রসারণের ফলে প্রকৃত ওবিসি সম্প্রদায়, বিশেষ করে হিন্দু ওবিসি সম্প্রদায়ের সংরক্ষণের অধিকার এবং সুযোগ-সুবিধা ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে (mamata)। রাজ্যের ওবিসি তালিকায় নতুন সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তি সরকারি চাকরি, শিক্ষা এবং অন্যান্য সুবিধার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ওবিসি সম্প্রদায়ের অংশকে হ্রাস করতে পারে। এটি সামাজিক ন্যায়বিচারের মূলনীতির বিরুদ্ধে বলে সমালোচনা করেছে বিজেপি।

এনসিবিসি’র উদ্বেগ (mamata)

জাতীয় পশ্চাদপদ শ্রেণি কমিশন এই জরিপ এবং তালিকা সম্প্রসারণের প্রক্রিয়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কমিশন রাজ্য সরকারের কাছে এই সিদ্ধান্তের পিছনে ব্যবহৃত তথ্য, জরিপের পদ্ধতি এবং নতুন সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তির যৌক্তিকতা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য দাবি করেছে।

তবে, রাজ্য সরকার এই তথ্য প্রদানে অনীহা দেখাচ্ছে, যা প্রক্রিয়াটির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এনসিবিসি’র চেয়ারপার্সন হংসরাজ গঙ্গারাম আহির বলেছেন, “ওবিসি তালিকায় কোনও সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তি একটি সংবেদনশীল বিষয়। এটি অবশ্যই স্বচ্ছ এবং তথ্যভিত্তিক হতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই তড়িঘড়ি পদক্ষেপ সামাজিক ন্যায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।”

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

বিরোধী দল, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), এই সিদ্ধান্তকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছে। বিজেপি নেতারা অভিযোগ করেছেন যে তৃণমূল কংগ্রেস মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ককে তুষ্ট করার জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছে। রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “মমতা ব্যানার্জি (mamata) প্রকৃত ওবিসি সম্প্রদায়ের অধিকার কেড়ে নিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের চেষ্টা করছেন। এটি হিন্দু ওবিসি সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।”

Advertisements

তিনি আরও বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ রাজ্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে উসকে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস (mamata) এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “রাজ্য সরকার সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ওবিসি তালিকায় নতুন সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তি সমাজের পশ্চাদপদ অংশের কল্যাণের জন্য।” তবে, এই দাবির সমর্থনে কোনও তথ্য বা জরিপের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

সামাজিক প্রভাব

এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যের হিন্দু ওবিসি সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। অনেকে মনে করছেন, তাদের সংরক্ষণের অধিকার এবং সুযোগ-সুবিধা কমে যাবে। বিশেষ করে শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে ওবিসি সংরক্ষণের ভাগ হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সামাজিক কর্মী অজিত মণ্ডল বলেন, “এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে বিস্তারিত জরিপ এবং সকল সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। তড়িঘড়ি এই পদক্ষেপ সামাজিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে।”

ভারত চিন টানাপোড়েন কাটাতে কিংদাও সফরে রাজনাথ

আইনি ও সাংবিধানিক প্রশ্ন

ওবিসি তালিকায় নতুন সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তি সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে(mamata)। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, ওবিসি তালিকায় কোনও সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এবং জরিপের প্রয়োজন। এনসিবিসি’র মতে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি। এই বিষয়ে আইনি চ্যালেঞ্জের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

মমতা ব্যানার্জির (mamata) নেতৃত্বাধীন সরকারের এই তড়িঘড়ি ওবিসি জরিপ এবং তালিকা সম্প্রসারণ রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। প্রকৃত ওবিসি সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে স্বচ্ছ ও তথ্যভিত্তিক প্রক্রিয়ার প্রয়োজন।

রাজ্য সরকারের অস্বচ্ছতা এবং এনসিবিসি’র প্রশ্নের উত্তর না দেওয়া এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ বাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক সম্প্রীতি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর কী প্রভাব ফেলবে, তা আগামী দিনে স্পষ্ট হবে।