আরামবাগ: হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের বন্যা পরিস্থিতি ঘুরে দেখতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে আরামবাগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee Visits Arambagh)। রাজ্যের একাধিক জেলায় টানা বৃষ্টির পরে এবং ডিভিসি’র (দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন) জল ছাড়ার জেরে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিকে মুখ্যমন্ত্রী ফের একবার ‘ম্যান মেড’ বলে কটাক্ষ করলেন, এবং নাম না করেও ডিভিসি-কে তীব্র আক্রমণ করলেন।
আজ দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে হেলিকপ্টারে করে আরামবাগে পৌঁছন। সেখান থেকে তিনি যান খানাকুল, পুরশুড়া ও গোঘাটের বন্যা কবলিত গ্রামগুলিতে। এই সমস্ত এলাকার মাঠঘাট জলের তলায়। বহু বাড়িতে ঢুকে পড়েছে জল। মানুষজন জলবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। হাজার হাজার বিঘা চাষের জমি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি দেখে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই দুর্যোগ পুরোপুরি মানুষের তৈরি। যেখানে সেখানে জল ছেড়ে দেওয়া, আগে থেকে রাজ্যকে না জানানো, ডিভিসি’র জল ছাড়ার পদ্ধতি একেবারেই অনিয়ন্ত্রিত। মানুষ এর খেসারত দিচ্ছে।”
এরপর মুখ্যমন্ত্রী যান কামারপুকুর হয়ে ঘাটালের উদ্দেশ্যে। ঘাটাল মহকুমার একাধিক এলাকাও প্রবল জলের চাপে ক্ষতিগ্রস্ত। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। ত্রাণ শিবির, শুকনো খাবার, ওষুধ এবং দ্রুত রাস্তা সংস্কারের নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রায় ১০,০০০-এর বেশি মানুষ ইতিমধ্যেই জলবন্দি অবস্থায় রয়েছেন হুগলি জেলায়।
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, “ডিভিসি যদি যথাযথ রিজার্ভার ড্রেজিং করত, তাহলে এত জল ছাড়তে হতো না। জল জমে থাকে বলে ওদের রিজার্ভার দ্রুত পূর্ণ হয়ে যায় এবং তারা বাধ্য হয় জল ছাড়তে। কিন্তু সেই ছাড়ার সময় রাজ্যকে না জানিয়ে দিলে নিচু এলাকার মানুষজনের প্রাণ সংশয় তৈরি হয়।”
ডিভিসি যদিও মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের দাবি, নিয়ম মেনেই এবং যথাসময়ে রাজ্যকে অবহিত করেই তারা জল ছাড়ে। তবে রাজ্য সরকার বারবার ডিভিসি’র বিরুদ্ধে সময়মতো না জানিয়ে জল ছাড়ার অভিযোগ তুলেছে।
আজকের আরামবাগ সফরের পর মুখ্যমন্ত্রী চলে যান পশ্চিম মেদিনীপুরের পথে। মেদিনীপুর শহরে রাত কাটাবেন তিনি। বুধবার তিনি ঝাড়গ্রাম জেলার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। সেখানে ভাষা আন্দোলনের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
এই সফরের মাধ্যমে রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দ্রুত ত্রাণ এবং পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে এই ‘ম্যান মেড’ দুর্যোগ নিয়ে রাজ্য ও ডিভিসি’র টানাপোড়েন যে আরও তীব্র হবে, তা নিশ্চিত বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।