পশুপালন পরিসংখ্যান ২০২৪ অনুযায়ী, প্রাণীজ প্রোটিন (দুধ, ডিম এবং মাংস) উৎপাদনের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) উত্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সোমবার এই দাবি করেছেন যে, দেশের বৃহত্তম রাজ্য উত্তরপ্রদেশ (Uttar Pradesh) এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্য মহারাষ্ট্রকে পিছনে ফেলে পশ্চিমবঙ্গ এখন প্রাণীজ প্রোটিন উৎপাদনের হারে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। বিশেষত, মাংস উৎপাদনে রাজ্যটি এখন দেশের সর্বোচ্চ উৎপাদক হিসেবে পরিচিত।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত এক পোস্টে জানিয়েছেন যে, কেন্দ্রীয় সরকারের সদ্য প্রকাশিত ‘পশুপালন পরিসংখ্যান ২০২৪’ অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ বর্তমানে দেশের সর্বোচ্চ মাংস উৎপাদনকারী রাজ্য। এই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে জানা গেছে যে, দেশের মাংস উৎপাদনে বাংলার অবদান বর্তমানে ১২.৬২ শতাংশ। এটি দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলির তুলনায় একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি, যা রাজ্যের পশুপালন খাতে উন্নতির প্রমাণ।
এছাড়া, দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও পশ্চিমবঙ্গের অর্জন গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যটি দুধ উৎপাদনে দেশের সর্বোচ্চ বার্ষিক বৃদ্ধির হার রেকর্ড করেছে। যেখানে জাতীয় গড় বার্ষিক বৃদ্ধির হার ৩.৭৮ শতাংশ, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের বার্ষিক বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৯.৬৭ শতাংশ। এটি প্রমাণ করে যে, রাজ্যের দুধ উৎপাদন খাত আরও দ্রুত উন্নতির পথে এগোচ্ছে এবং কৃষকদের মধ্যে দুধ উৎপাদনের জন্য আরও বেশি মনোযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের এই সাফল্য শুধুমাত্র প্রাণীজ প্রোটিন উৎপাদনের পরিসংখ্যানেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি রাজ্যের কৃষি এবং পশুপালন খাতের উন্নতির একটি বড় প্রতীক। রাজ্য সরকারের নীতি এবং উদ্যোগের ফলে কৃষকরা এখন উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাঁদের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারছেন। রাজ্য সরকার পশুপালন খাতের উন্নতির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রশিক্ষণ, কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি, উন্নত পুষ্টি এবং পশুর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ।
এই সাফল্য কৃষকদের আর্থিক উন্নতি এবং রাজ্য অর্থনীতির উন্নতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন যে, পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা এখন শুধু ধান, গম এবং অন্যান্য শস্য উৎপাদনেই নয়, বরং পশুপালন ও দুধ উৎপাদনেও নিজেদের দক্ষতা এবং আয় বৃদ্ধি করতে সক্ষম হচ্ছেন। এর ফলে রাজ্যে সামগ্রিকভাবে আর্থিক উন্নতি হয়েছে এবং রাজ্য এখন কৃষি ও পশুপালন উভয় ক্ষেত্রেই শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেছে।
পশুপালন খাতের এই সাফল্য শুধু পশ্চিমবঙ্গের জন্যই নয়, দেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি উদাহরণ যে, কৃষি এবং পশুপালন খাতের আধুনিকীকরণের মাধ্যমে রাজ্যগুলি নিজেদের উন্নতির জন্য নতুন পথ তৈরি করতে পারে। ভবিষ্যতে, পশ্চিমবঙ্গের এই সাফল্য অন্যান্য রাজ্যগুলির জন্য একটি মডেল হতে পারে।