কলকাতা: বিজেপি শাসিত ডবলইঞ্জিন রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষীদের উপর চলতে থাকা লাগাতার নিপীড়ন ও তাঁদের ‘বাংলাদেশি’ বলে চিহ্নিত করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে এবার কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। একুশে জুলাই শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকেই এই অভিযোগ তুলেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। আর এবার সরাসরি রাজ্যজুড়ে আন্দোলনের ডাক দিলেন তিনি।
সোমবার ধর্মতলার সভা থেকে দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে মমতা জানান, ২৭ জুলাই থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সামিল হবে তৃণমূল। এরপর মঙ্গলবার নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দেন, রাজ্যে তাঁর সফর চলাকালীনও যেখানে যেখানে যাবেন, সেখানে এই বাংলাভাষা-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মিছিল ও প্রতিবাদ জানানো হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলাভাষীদের ‘বাংলাদেশি’ বলে দাগিয়ে দিচ্ছে বিজেপি শাসিত কিছু রাজ্য। এটা বরদাস্ত করা হবে না। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে অপমান করলে আমরা চুপ করে থাকব না। বাংলার সম্মান রক্ষায় তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদে নামছে।”
বীরভূম সফরে মুখ্যমন্ত্রী:
২৭ এবং ২৮ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাবেন বীরভূম জেলায়। ওই দুই দিন সেখানে একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন তিনি। একইসঙ্গে বাংলা ভাষার ওপর আক্রমণের বিরুদ্ধে সেখানেও কর্মসূচি পালিত হবে।
২৭ জুলাই, নানুর দিবসেই মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছাবেন বীরভূমে। সেই দিন জয়দেব এলাকায় অজয় নদের উপর নির্মিত একটি নতুন সেতুর উদ্বোধন করবেন তিনি। স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবিকে মান্যতা দিয়ে ওই সেতুর নামকরণ করা হয়েছে ‘জয়দেব-নীলকণ্ঠ সেতু’, বিখ্যাত সাধক কবি জয়দেব ও নীলকণ্ঠ মুখোপাধ্যায়ের নামে।
বীরভূম সফরের পাশাপাশি পশ্চিম বর্ধমান জেলার একাধিক প্রকল্পও এই সফরে উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। এর মধ্যে রয়েছে পশ্চিম বর্ধমান জেলা শাসকের কার্যালয় এবং আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের নতুন ভবন। মুখ্যমন্ত্রীর হাতে এই প্রকল্পগুলির শুভ উদ্বোধন হতে চলেছে ২৮ জুলাই।
এই সফরের মধ্য দিয়েই একপ্রকার বার্তা দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী— কেবল কলকাতায় নয়, রাজ্যের প্রত্যন্ত জেলাগুলিতেও বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যে কোনও অপপ্রচারের কড়া জবাব দেওয়া হবে। আগামী দিনেও জেলা সফর চলাকালীন এমন প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূল কংগ্রেসের এই রাজ্যব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচিকে ঘিরে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক উত্তাপ তৈরি হয়েছে। বিজেপি এখনও পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে সরাসরি কিছু না বললেও দলীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, তাঁরা এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করতে চলেছে। তবে তৃণমূল সূত্রে স্পষ্ট, বাংলার ভাষা ও সম্মানের প্রশ্নে কোনও আপস নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শুরু হচ্ছে ‘বাংলা বাঁচাও’ আন্দোলনের নতুন অধ্যায়।