বিজেপিকে কটাক্ষ, নির্বাচন কমিশনকে হুঁশিয়ারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

বিজেপিকে কটাক্ষ করে নির্বাচন কমিশনকে কার্যত কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তিনি বলেন, “আমি নির্বাচন কমিশনকে প্রণাম জানাচ্ছি, স্যালুট জানাচ্ছি। কিন্তু দয়া…

“Bengalis’ Talent Is Unmatched: Mamata Banerjee Strikes Emotional Chord at TMCP Rally”

বিজেপিকে কটাক্ষ করে নির্বাচন কমিশনকে কার্যত কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তিনি বলেন, “আমি নির্বাচন কমিশনকে প্রণাম জানাচ্ছি, স্যালুট জানাচ্ছি। কিন্তু দয়া করে বিজেপির ললিপপ হয়ে যাবেন না। বিজেপির ইশারায় যেন কিছু না হয়।” মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে।

বিগত কয়েক মাস ধরেই নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। অভিযোগ, রাজ্যে একের পর এক ভোটে বিজেপির স্বার্থসিদ্ধির জন্য কমিশনকে ব্যবহার করা হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবারের বক্তব্যে সেই অভিযোগকেই জোরালো করলেন। তিনি বলেন, “হুমকি দিয়ে কিছু হবে না। ভোটের আগে এনআরসি নামক আতঙ্ক দেখানো হয়। বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধন করে বাঙালি ভাষাভাষী মানুষদের বাংলাদেশি তকমা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটা আমরা কোনোভাবেই হতে দেব না।”

   

মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, বিজেপি-শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার ও নির্বাচন কমিশনের একটি অংশ মিলে রাজ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে ভোটের আগে ভোটার তালিকা পুনর্নিরীক্ষণের নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “১৯৭১ সালের আগে যারা এসেছেন, তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করার পরিকল্পনা চলছে। বিজেপি রাজনীতির স্বার্থে মানুষের অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে চাইছে।”

বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি গর্ব প্রকাশ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাংলা আমাদের শিরায়-শিরায় প্রবাহিত। যে কোনও অপমান আমরা মেনে নেব না। আমরা ‘জয় হিন্দ’ এবং ‘জয় বাংলা’ দুই স্লোগানই তুলব। বিশ্বের অন্যতম প্রধান ভাষা বাংলা। বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে অসম্মান করা হলে তার জবাব বাংলার মানুষ দেবে।”

তিনি আরও দাবি করেন, প্রায় ২২ লক্ষ শ্রমিক রাজ্যের বাইরে কাজ করছেন, কিন্তু তাঁদের অনেকেই বিজেপি-শাসিত রাজ্যে বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে নিগৃহীত হচ্ছেন। মমতা বলেন, “যখন বাংলার বাইরে আমাদের শ্রমিকদের উপর হামলা হয়, তখন আমরা উদ্বিগ্ন হই। অথচ বাংলায় প্রায় দেড় কোটি বাইরের রাজ্যের মানুষ কাজ করছে, তাদের নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করি। বিজেপি কি একই নিরাপত্তা দিতে পারে?”

Advertisements

মমতার এই মন্তব্য আসন্ন লোকসভা ভোটের প্রেক্ষিতে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ভোটের আগে এনআরসি ও সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (CAA) নিয়ে আবারও রাজনীতির তাপমাত্রা বাড়ছে। তৃণমূল শিবির অভিযোগ করছে, বিজেপি এই ইস্যুগুলি উসকে দিয়ে রাজ্যের মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে চাইছে।

নির্বাচন কমিশনের উপর সরাসরি আক্রমণ শানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সতর্ক করে দেন, “দেশের মানুষ সবকিছু দেখছে। আগামী দিনে মানুষ কোনও পক্ষপাতিত্ব ক্ষমা করবে না।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলায় এনআরসি ইস্যু ভোটের অন্যতম বড় হাতিয়ার হয়ে উঠতে চলেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বার্তা স্পষ্ট করে দিচ্ছে, আগামী নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে আঞ্চলিক পরিচয় ও বাঙালিয়ানাকেই ঢাল করতে চাইছে তৃণমূল।