সোমবার বোলপুরের গীতাঞ্জলি অডিটোরিয়ামে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ফের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, কেন্দ্র সরকার রাজ্যের প্রাপ্য অর্থ আটকে রেখেছে, যার ফলে রাজ্যকে চরম আর্থিক চাপে পড়তে হচ্ছে। তবুও রাজ্য সরকার কোনওভাবেই উন্নয়নমূলক কাজ থামাতে চাইছে না। বরং এই প্রতিকূলতার মধ্যেই কীভাবে কাজ চালিয়ে যেতে হবে, তার সুস্পষ্ট রূপরেখা তিনি দেন এদিনের সভা থেকে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেন্দ্র টাকা আটকে রেখেছে। এই অবস্থাতেও উন্নয়ন বন্ধ হবে না। আমরা নিজের টাকাতেই কাজ করব।” এই প্রসঙ্গে তিনি জানান, এলাকার কাজের জন্য জেলা পরিষদ থেকে ৫ শতাংশ, পঞ্চায়েত সমিতি থেকে ৫ শতাংশ এবং স্থানীয় বিধায়কদের ১০ লক্ষ টাকা করে অনুদান দিতে হবে। এই সমস্ত অর্থ সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসকের (DM) কাছে জমা পড়বে। এরপর রাজ্য সরকার বাকি অর্থ প্রদান করে উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন করবে।
এই সভা থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আধিকারিকদের একাধিক নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা প্রশাসনকে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করার কথা বলেন তিনি। পাশাপাশি স্থানীয় সমস্যা, রাস্তা, পানীয় জল, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও গ্রামীণ কর্মসংস্থানের মতো বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
এছাড়াও, ভিনরাজ্যে কর্মরত বাঙালিদের উপর অত্যাচারের প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, “বর্তমানে রাজ্যের প্রায় ২২ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করছেন। অনেক সময় দালালের মাধ্যমে তাঁরা বাইরে যান, কিন্তু যখন সমস্যায় পড়েন, সেই দালালরা পাশে থাকেন না। তাই আমি বলছি, ওঁরা ফিরে আসুন। আমরা সবরকম নাগরিক সুবিধা দেব।”
তিনি আরও বলেন, “যাঁদের থাকার জায়গা নেই, তাঁদের জন্য সরকার ক্যাম্প তৈরি করবে। রেশন কার্ড, স্বাস্থ্যসাথী, কর্মশ্রী প্রকল্প, জব কার্ড— সব কিছু দিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।” এই ঘোষণা থেকে স্পষ্ট, রাজ্য সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সম্মানজনক জীবনের সুযোগ দিতে বদ্ধপরিকর।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বোলপুরে জোড়া কর্মসূচি ছিল। প্রশাসনিক বৈঠকের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন এবং শিলান্যাস করেন। সভা শেষে তিনি স্থানীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন এবং তৃণমূলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও পর্যালোচনা করেন।
এই প্রশাসনিক সভা থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার মধ্যেও রাজ্য উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলবে। এবং সেই লক্ষ্যে নেতৃত্ব দেবেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। জনস্বার্থে কোনও কাজ থেমে থাকবে না— এই বার্তাই পৌঁছে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।