পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল জুড়ে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি৷ লাগাতার বৃষ্টিপাত এবং নদীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় গ্রাম পর গ্রাম প্লাবিত। হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন ত্রাণ শিবিরে। এই কঠিন সময়ে তাদের পাশে দাঁড়ালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
মঙ্গলবার ঘাটালের এক ত্রাণ শিবিরে হঠাৎই হাজির হন তিনি। শুধু পরিদর্শন করেই থেমে থাকেননি, বন্যার্তদের সঙ্গে বসে কথা বলেন, শোনেন তাঁদের দুর্দশার কাহিনি এবং পরে নিজে হাতে পরিবেশন করেন ডিম-ভাত।
সাধারণ মানুষের পাশে ‘দিদি’
ত্রাণ শিবিরে উপস্থিত মানুষজন প্রথমে অবাক হয়ে যান মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে। বহু মানুষের চোখে জল আসে, কারণ তাঁরা জানতেন না যে রাজ্যের শীর্ষনেত্রী নিজে তাঁদের পাশে এসে দাঁড়াবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের আশ্বস্ত করেন, বলেন, “আমি আছি, ভয় পেও না। সরকার তোমাদের পাশে আছে। যতদিন না ঘর ফিরতে পারছো, ততদিন সরকার সব রকমের সাহায্য করবে।”
তিনি ত্রাণ শিবিরে থাকা সমস্ত মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন, কার কোথা থেকে আসা, কী অবস্থায় ঘরছাড়া হয়েছেন, কীভাবে বাঁচছেন – সব কিছু মন দিয়ে শোনেন। কারও হাতে নিজের হাত রাখেন, কারও মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। শিশুদের কোলে নেন, প্রবীণদের পাশে বসে সান্ত্বনা দেন।
ডিম-ভাত পরিবেশন করে নজির
এই মানবিক মুহূর্তে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে দুপুরের খাবারের সময়। শিবিরে তখন রান্না হচ্ছিল ডিম-ভাত। মুখ্যমন্ত্রী নিজে রান্নাঘরে যান, রান্নার খোঁজ নেন, তারপর প্লেট হাতে তুলে নিয়ে একে একে বন্যার্তদের সামনে গিয়ে পরিবেশন করেন খাবার। তিনি বলেন, “তোমরা আগে খেয়ে নাও। শরীর ঠিক রাখতে হবে। আমি খাওয়াতে এসেছি, কারণ তোমরা আমার পরিবার।”
এই ছবি দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায়। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনীতিক মহলেও প্রশংসার ঝড় ওঠে। অনেকেই বলেন, এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলাদা পরিচয় – তিনি শুধু মুখ্যমন্ত্রী নন, তিনি মানুষের ‘দিদি’।
প্রশাসনিক তৎপরতা ও আশ্বাস
ঘাটাল পরিদর্শনের সময় মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে করে নিয়ে যান জেলার প্রশাসনিক কর্তাদেরও। পরিস্থিতির খতিয়ান নিয়ে একাধিক নির্দেশ দেন দ্রুত ত্রাণ সরবরাহ, চিকিৎসা পরিষেবা এবং পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে। তিনি বলেন, “জল নামার পরেও আমাদের কাজ শেষ হবে না। আমরা ঘর মেরামত, রাস্তা সংস্কার এবং কৃষকদের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতেও প্রস্তুত। কোনও অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না।”
মুখ্যমন্ত্রী জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন যাতে প্রতিটি পরিবারকে পর্যাপ্ত খাদ্য, ওষুধ ও পানীয় জল দেওয়া হয়। পাশাপাশি, চিকিৎসা ক্যাম্প খোলার ব্যবস্থাও তৎক্ষণাৎ করতে বলেন।
ভারতীয় পর্যটকদের জন্য ফিলিপিন্সের ফ্রি ভিসা ঘোষণা মোদীর
মানুষের মুখে হাসি
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে ত্রাণ শিবিরে যেন একটা আলাদা প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। অনেকেই বলেন, “দিদি এলেন, তাই সাহস পেলাম। শুধু সরকারের ঘোষণা শুনে থাকলে মন ভরত না। তিনি নিজে এসে আমাদের পাশে দাঁড়ালেন, তাই মনটা ভালো লাগছে।”