বনগাঁ ও গাইঘাটায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নির্ধারিত সফরকে কেন্দ্র করে ফের উত্তপ্ত রাজনীতির হাওয়া। সফরের আগেই ঠাকুরবাড়ি চত্বরে ঝুলে পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘ধিক্কার’ জানিয়ে একাধিক ব্যানার। আর সেই ব্যানার ঘিরেই শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক তরজা।
আইএআরের প্রতিবাদে মঙ্গলবার বনগাঁয় এক সভা এবং গাইঘাটার চাঁদপাড়ায় পদযাত্রায় অংশ নেবেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তিনি ঠাকুরবাড়িতে প্রবেশ করবেন কি না, সে বিষয়ে এখনও কোনও সরকারি বার্তা নেই। কিন্তু তাঁর সফরের আগেই ঠাকুরবাড়ির নাটমন্দির, পুকুরঘাটসহ একাধিক জায়গায় দেখা মিলেছে ধিক্কার ব্যানারের।
ব্যানারে লেখা, “পূর্ণব্রহ্ম শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর ও যুগাবতার শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরকে ইচ্ছাকৃতভাবে রঘুচাঁদ ও গরুচাঁদ বলে কটাক্ষের প্রতিবাদে মতুয়া সমাজ মুখ্যমন্ত্রীকে ধিক্কার জানায়।” স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকালে শান্তনু ঠাকুরের অনুগামীদের একাংশই এই ব্যানার লাগান।
ব্যানার বিতর্কে সরব হয়েছেন মতুয়া মহাসঙ্ঘের নেতা তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। তিনি তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরকে। তিনি জানান, “প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন ঠাকুরবাড়িতে এসেছিলেন, তখন চাইলে আমরাও প্রতিবাদ করতে পারতাম। বিজেপি ঠাকুরবাড়ির মাটি-জলকে অপমান করেছে। কিছুই দেননি মতুয়াদের, বরং এখন বেনাগরিক করার চক্রান্ত চলছে।”
তিনি আরও দাবি করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মতুয়া সমাজের জন্য বহু উদ্যোগ নিয়েছেন, এবং এ ধরনের আচরণ ‘ছোট মানসিকতা’র পরিচয়।
বিপরীতে, অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক বিজিত কান্তি মণ্ডল মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “একজন মানুষকে গরু বলা যায়? এ আমরা আগে শুনিনি। মুখ্যমন্ত্রী হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরকে কটুক্তি করেছেন। তাই ভক্তরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন।”
এদিকে, মমতা বালা ঠাকুরের নেতৃত্বাধীন মহাসঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক সুকেশ চৌধুরী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এলে আমরা মতুয়ারা স্বাগত জানিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রীও সবার। তিনিও ঠাকুরবাড়িতে আসতেই পারেন। যাঁরা ছোট মানসিকতার, তাঁরাই এমন আচরণ করছেন।”
ঠাকুরবাড়ি বহুদিন ধরেই রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। নাগরিকত্ব বিতর্ক, বিজেপি–তৃণমূলের ক্ষমতার লড়াই এবং মতুয়া ভোটব্যাঙ্কের গুরুত্ব সবকিছু মিলিয়ে প্রত্যেক সফরই তৈরি করে নতুন সমীকরণ। আগামী মঙ্গলবারের সভা ও পদযাত্রা ঘিরে তাই নজর এখন গোটা রাজ্যের। ঠাকুরবাড়ির বুকে নতুন কোন রাজনৈতিক বার্তা লিখিত হয়, সেটাই দেখার।
