মুখ্যমন্ত্রীর মামলায় আইনজীবী বদল, মমতার পক্ষে কল্যাণ

রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) দায়ের করা মামলায় এবার আইনজীবী বদলানো হয়েছে। আগে সঞ্জয় বসু মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে মামলাটি পরিচালনা…

Lawyer Change in CM's Case, Kalyan Bandyopadhyay to Represent Mamata

রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) দায়ের করা মামলায় এবার আইনজীবী বদলানো হয়েছে। আগে সঞ্জয় বসু মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে মামলাটি পরিচালনা করছিলেন। তবে এবার সেই দায়িত্ব নিচ্ছেন তৃণমূল সাংসদ এবং বর্ষীয়ান আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা হাই কোর্টে বুধবার এই পরিবর্তনের খবর জানানো হয়েছে। তবে এদিন মামলার শুনানি হয়নি এবং পরবর্তী শুনানির তারিখ পরে জানানো হবে।

মামলার পটভূমি অনেকটাই জটিল। গত বছর বিধানসভা উপনির্বাচনের পর দুই নবনির্বাচিত বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় (বরানগর) এবং রেয়াত হোসেন (ভগবানগোলা) শপথ নেওয়ার বিষয়টি রাজ্য এবং রাজভবনের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে। রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের দাবি ছিল, রাজভবনে গিয়ে শপথ নিতে হবে এই দুই বিধায়ককে। বিধায়কদের দাবি ছিল, রাজ্যপাল বিধানসভার মঞ্চে এসে তাদের শপথ নিন। এই বিষয়টি নিয়ে সংঘাত চরম আকার নেয় এবং রাজ্যপাল এর বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর এবং তার দলীয় সদস্যদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেন।

kolkata24x7-sports-News

   

এই মামলার শুনানি চলাকালীন, রাজ্য এবং রাজভবনের মধ্যে নানা মতবিরোধ উঠে আসে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট চেষ্টা করা হয় বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য, কিন্তু রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন হয়নি। রাজ্যপাল নিজের মতের প্রতি অটল ছিলেন, এবং বিধায়কদের শপথ গ্রহণের বিষয়ে তার দাবি ছিল স্পষ্ট।

এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মামলার পরিচালনায় সঞ্জয় বসুর পরিবর্তে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়োগ দেন। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী এবং দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি ও আইনসভায় তার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মামলাটি পরিচালনা করবেন। এই পরিবর্তনের সাথে সাথে, ফক্স অ্যান্ড মণ্ডল সলিসিটার সংস্থাও আদালতে একটি আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছে, যাতে হাই কোর্ট রাজ্যপাল বনাম মুখ্যমন্ত্রী মামলার শুনানি শুরুর আগে কোনো পদক্ষেপ না নেয়।

এছাড়া, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) মানহানির মামলা আরও জটিল হয়ে ওঠে। রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল কংগ্রেসের বেশ কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন এবং মানহানির মামলা দায়ের করেন। রাজ্যপাল এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিরোধ এবং এই মামলা দাখিল হওয়ার পর কলকাতা হাই কোর্টে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে সংঘাত শুধু এই মামলা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং বিভিন্ন নীতিগত এবং প্রশাসনিক বিষয়েও মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়েছিল। এই বিষয়গুলির মধ্যে অন্যতম ছিল বিধায়কদের শপথ নেওয়ার স্থান এবং সময় নিয়ে বিরোধ। রাজ্যপাল রাজভবনে শপথ নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন, তবে বিধায়কদের এই প্রক্রিয়া মেনে নেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার দৃঢ় ছিল।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস এবং রাজ্য সরকার নানা মাধ্যমে রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু রাজ্যপাল তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। এর ফলস্বরূপ, বিষয়টি আদালতের কাছে পৌঁছেছে এবং এখন সেই মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হবে।

এই মামলা এবং রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের মধ্যে চলমান বিরোধের কারণে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এক নতুন মোড় এসেছে। এ ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা ভবিষ্যতের ওপর নির্ভর করছে।