রাজনৈতিক সৌজন্যের এক অনন্য উদাহরণ তৈরি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। রাজ্যের শাসক এবং বিরোধী দলের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সরিয়ে রেখে এবার বিজেপি নেতাদেরও ডাকা হলো নবান্নে আয়োজিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে। সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে নবান্নে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাইবস অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের বৈঠক। সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে দুই বিজেপি নেতাকেও। রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের কাছে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে এবং টেলিফোনে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগও করা হয়েছে।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু এবং আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন সাংসদ বিজেপি নেতা দশরথ তিরকে। এর আগে ২০২২ সালে শিলিগুড়িতে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল বৈঠকেও দশরথ তিরকে যোগ দিয়েছিলেন। এবার নবান্নে আয়োজিত হতে চলা এই বৈঠক হবে ট্রাইবস অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের চতুর্থ সভা।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কাউন্সিল গঠন করেন রাজ্যের আদিবাসী সমাজের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে। ইতিমধ্যেই কলকাতা, জলদাপাড়া এবং উত্তরকন্যায় এই কাউন্সিলের তিনটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হল রাজ্যের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সমস্যাগুলি সরাসরি শুনে তা সমাধানের পথ খোঁজা।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, সোমবারের বৈঠকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে। এর মধ্যে অন্যতম হল—
আদিবাসীদের জাতি শংসাপত্র প্রদানের প্রক্রিয়া দ্রুততর করা।
শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত করা এবং ছাত্রছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত হস্টেলের ব্যবস্থা।
ভূমিহীন পরিবারদের পাট্টা প্রদান।
সমাজের বয়স্ক সদস্যদের জন্য পেনশন সুবিধা নিশ্চিত করা।
আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণমূলক প্রকল্প আরও কার্যকর করা।
বৈঠকে মোট ১৫ জন সদস্যকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যার মধ্যে দুই বিজেপি নেতার নাম রয়েছে। এই পদক্ষেপে রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগ রাজনীতিতে সৌজন্য এবং সহযোগিতার বার্তা বহন করছে। বিরোধী দল বিজেপিকে এই বৈঠকে ডেকে রাজ্য সরকার যে আদিবাসী সমাজের উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে, সেটাই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভোটের রাজনীতির বাইরে গিয়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের উন্নয়ন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যের একাধিক জেলায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা না গেলে সামগ্রিকভাবে রাজ্যের উন্নয়নও সম্ভব নয়।
মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে প্রশাসনিক মহল। নবান্নের এক আধিকারিকের কথায়, “আদিবাসী উন্নয়ন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অত্যন্ত সংবেদনশীল। রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে সব দলকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করাই এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য।”
রাজনৈতিক সৌজন্যের এই উদ্যোগ রাজ্য রাজনীতিতে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। আগামী দিনে এই বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়িত হলে রাজ্যের আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলেই আশা করা হচ্ছে।