নবান্নে রণংদেহী মমতা! পুর-পরিষেবা জবরদখল নিয়ে মন্ত্রী-মেয়রদের চাঁচাছোলা ভর্ৎসনা

আগেই ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন, আর সোমবার জমি জবরদখল, পুর পরিষেবা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভের বিস্ফোরণ দেখল বাংলা। সোমবার মন্ত্রী, পুরনিগমের মেয়র ও পুরসভার চেয়ারম্যানদের নিয়ে নবান্ন…

Mamata Banerjee ordered TMC councilors and policemen to stop greed for hawkers ,

আগেই ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন, আর সোমবার জমি জবরদখল, পুর পরিষেবা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভের বিস্ফোরণ দেখল বাংলা। সোমবার মন্ত্রী, পুরনিগমের মেয়র ও পুরসভার চেয়ারম্যানদের নিয়ে নবান্ন সভাঘরের বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রীর। সেখানেই বেনিয়ম নিয়ে সরব হন তিনি। নাম করে করে নিশানা করেন মন্ত্রী, মেয়র, চেয়ানম্যানদের। সাফ বলেন, ‘পরিষেবা না পেলে পুরসভার দরকার কী? একের পর এক বেআইনি বাড়ি তৈরি হচ্ছে, বাংলার ছবি বদলে দিচ্ছে। জনপ্রতিনিধি থেকে পুলিশ-আমলা অনেকেই যুক্ত, সবার নাম প্রকাশ্যে বলে অপমান করতে চাই না।’

কী বলেছেন মমতা-

   

‘পুরসভা রাখার দরকার কী?’

বৈঠকের শুরুতেই মমতা বলেন, ‘আমার কথা কিছুটা তিক্ত হলেও মনে রাখবেন পুরসভা কিন্তু মানুষকে পরিষেবা দেয়। আমি বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছি, কোথাও যখন দখলদারি চলছে, তখনও কোনও অ্য়াকশন নেওয়া হচ্ছে না। কেউ টাকা খাওয়াচ্ছে, কেউ টাকা খাচ্ছে। কিন্তু তারা ভুলে গিয়েছে রাজ্যের আইডেন্টিটিটা এটাতে নষ্ট হচ্ছে। মানুষ যদি উন্নয়নের কাজ না পায় তাহলে সেই পুরসভা বা পঞ্চায়েত রাখার দরকার কী?’

‘বাংলার আইডেন্টিটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আপনাদের টাকা নেওয়ার জন্য’

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘হাওড়ায় প্রচুর বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে। রথীন যখন চেয়ারম্যান ছিল, হাওড়াটাকে ১২টা বাজিয়ে দিয়ে গিয়েছে। অ্যাম্বুল্যান্স যাওয়ার জায়গা নেই। নো অ্যাকশন। কারণ প্ল্যান পাশ করার জন্য মানুষকে অনেক হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। অনলাইনে ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। তাতেও কাজ হয়নি। আমি চাইনা কাউকে হেনস্থা হতে হোক। কিন্তু একটা গ্রুপ তৈরি হয়েছে। খালি জায়গা দেখলেই লোক বসিয়ে দিচ্ছে। বাংলার আইডেন্টিটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আপনাদের টাকা নেওয়ার জন্য, কেন বুঝতে পারছেন না? জমি পাচ্ছেন বেচে দিচ্ছেন। খুব খারাপ পারফরম্যান্স, কেন তৈরি করা হয়েছিল আমি জানি না।’

‘কে খাচ্ছেন না জানি না, নিশ্চয় দিয়েই খাচ্ছেন’

মমতার অভিযোগ বললেন, ‘বালির এসডিও অমৃতা কী করছেন, কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। নিজেরা টেন্ডার দিচ্ছেন, কার থেকে কতটা খাচ্ছেন জানি না। কে খাচ্ছেন, কে খাচ্ছেন না জানি না। নিশ্চয় দিয়েই খাচ্ছেন। আমি এই কথাগুলো বলার জন্য মোটেই খুশি নেই, আমি দুঃখিত।’

‘একটা ঢাকনা করলেও খুলে বিক্রি করে দিচ্ছেন’

পুরসভাগুলির পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মমতা বলেন, ‘কোথাও কোথায়ও আলো জ্বলতেই থাকে, কোথাও জল বন্ধ করা হয় না। রাস্তা সারানো হয় না। তিনি বলেন, ‘একটা ঢাকনা করলেও কেউ খুলে বিক্রি করে দিচ্ছেন।’

‘আমার বাড়ি থেকে শুরু করুন’

বেআইনি নির্মাণ মমতা মুখ খুলেছেন। বলেছেন, ‘হাতিবাগান, গড়িয়াহাটের অবস্থা খারাপ। ওয়েবেলের কাছে দেখলাম কত দোকান বসেছে, সবাই আউটসাইডার। নোংরা করে রেখে দিয়েছে। কেন নতুন একটা জোন করা হচ্ছে না? বেআইনিভাবে চারতলা-পাঁচ তলা তোলা হচ্ছে, কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না। দুএকজনকে গ্রেফতার করুন, দু-একটা নির্মাণ ভাঙুন। আমার বাড়ি থেকে শুরু করুন। কেন বেআইনি কোনও জিনিস আমরা মানব।’

‘আইসি হলে ইনকাম করে নেবেন, এসব আর করবেন না’

প্রশাসনিক কর্তাদের কড়া বার্তা মমতার। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কারও কারও অভ্যাস হয়ে গিয়েছে, আইসি হলে যতটা পারি ইনকাম করে নিই, এসডিও হলে একটা সঞ্চয় করে নিই, ডিএ হলে সঞ্চয় করে নেব- এগুলো অনেক হয়েছে, আর করবেন না প্লিজ, এবার বড্ড চোখে লাগছে।’

‘সুজিত বসু লোক বসাচ্ছেন কম্পিটিশন করে-হোয়াই হোয়াই…’

সল্টলেক-রাজারহাট চত্বর নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। মন্ত্রী সুজিত বসুকে নিসানা করে বলেন, ‘সল্টলেক দেখে আমার লজ্জা লাগছে। বেআইনি দখল বাড়ছে। ইচ্ছামতো সুজিত বসু লোক বসাচ্ছেন কম্পিটিশন করে। কেন বাইরের লোক বসাবেন। ছবি দেখালে নিজেরা লজ্জা পাবেন। সবাই ত্রিপল লাগিয়ে বসে পড়ছেন, কেন কেন কেন… আমি জানতে চাই। কত টাকার বিনিময়ে এসব হচ্ছে, কারা নিয়েছে টাকা। সল্টলেকের কাউন্সিলররা কেন কাজ করে না? রাস্তা ঝাঁট দেয় না। এবার কি আমাকে রাস্তা ঝাঁট দিতে হবে?’

টেন্ডার নিয়ে কড়াবার্তা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘আজ থেকে লোকালি কোনও টেন্ডার করতে দেব না, সব কেন্দ্রীয়ভাবে হবে। এর জন্য আমি কমিটি তৈরি করে দিচ্ছে। কমিটিতে থাকবেন- মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, অর্থ সচিব, সেচ দফতরের সচিব, সিপি, ডিজি, এডিজি আইন-শৃঙ্খলা।’

‘উন্নয়ন পর্ষদগুলিতে কী কাজ হয়?’

মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্ন, ‘আর্বান ডিপার্টমেন্টের সেক্রেটারি… কী কাজ তাঁর! কতকগুলো বোর্ড রেখে দিয়েছে। দফতরটা রাখার দরকার কী। ৪০০-৫০০ লোক রেখেছে। দিঘা উন্নয়ন অথরিটির আর কোনও প্রয়োজন আছে কি? বিরাট বাড়িতে ৪০০-৫০০ লোক, কারও গা টিপছে, কারও পা টিপছে। আরাম করছে। তাঁদের যেখানে সরকারি কর্মী নেই, সেখানে কাজে লাগিয়ে দাও। হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদও তাই। পুরসভা আছে তো কাজ করার জন্য।’

‘কাঁচা রাস্তা-নিকাশির হাল খারাপ’

কলকাতা পুরনিগমের উন্নয়ন কাজেও খুশি নন মমতা। বলেন, ‘অ্যাডেড এরিয়ায় কোনও প্ল্যানিং নেই। পুরসভার মধ্যে তাই কাঁচা রাস্তা রয়ে গিয়েছে। তর্ক করার আগে ভাল করে দেখে নিন। নিকাশি নালা পরিষ্কারের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে কোটি কোটি টাকা দেওয়া হলেও কোনও কাজ হচ্ছে না।’