প্লাবিত হুগলির কামারপুকুরে উন্নয়ন উদ্যোগে মুখ্যমন্ত্রী, ঘোষণা ১০ কোটি টাকার অনুদান

হুগলির প্লাবিত এলাকাগুলির পরিদর্শনে গিয়ে মঙ্গলবার কামারপুকুরে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সেখানেই তিনি ঘোষণা করেন, শ্রীরামকৃষ্ণদেবের জন্মস্থান কামারপুকুর ও…

mamata banerjee speaks on nrc

হুগলির প্লাবিত এলাকাগুলির পরিদর্শনে গিয়ে মঙ্গলবার কামারপুকুরে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সেখানেই তিনি ঘোষণা করেন, শ্রীরামকৃষ্ণদেবের জন্মস্থান কামারপুকুর ও তার সংলগ্ন এলাকাগুলির সার্বিক উন্নয়নের জন্য গঠিত হচ্ছে একটি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের এক জন স্বামীজিকে বোর্ডের প্রধান করা হয়েছে। সঙ্গে থাকবেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ।

Advertisements

এই বোর্ডের প্রধান কাজ হবে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, শ্রীমা সারদা ও স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতিবিজড়িত কামারপুকুর ও সংলগ্ন অঞ্চলের উন্নয়ন ও পর্যটন প্রসারের রূপরেখা তৈরি করা। বোর্ডের সদস্যরাও নির্বাচন করবেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের স্বামীজি স্বয়ং।

   

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন কামারপুকুরে একটি নতুন অতিথি নিবাস ও পার্কিং লট-এর উদ্বোধন করেন। এই দুই পরিকাঠামোগত প্রকল্প নির্মাণে ১০ কোটি টাকার অনুদান ঘোষণা করেন তিনি রাজ্যের তরফে। উপস্থিত ছিলেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের একাধিক স্বামীজি, মুখ্যসচিব, স্থানীয় প্রশাসনিক আধিকারিকরা এবং এলাকার মানুষজন।

ধর্মীয় সহনশীলতা ও বাংলার ভাষা-সংস্কৃতির বার্তা
কামারপুকুরে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী স্মরণ করেন শ্রীরামকৃষ্ণ, শ্রীমা সারদা ও স্বামী বিবেকানন্দর আদর্শ ও বাণী। বলেন, “হিন্দু ধর্ম বোঝার জন্য অন্য কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এই মাটিতেই শ্রীরামকৃষ্ণ, সারদা মা, এবং বিবেকানন্দের আদর্শ রয়েছে। তাঁরা ধর্মীয় সহনশীলতা ও সর্বধর্ম সমন্বয়ের বাণী দিয়ে গিয়েছেন, যা আজও প্রাসঙ্গিক।”

তিনি তুলে ধরেন স্বামী বিবেকানন্দর ঐতিহাসিক উক্তি— “একতাই আমাদের বল, বিচ্ছিন্নতা পতনের কারণ।” পাশাপাশি উল্লেখ করেন শ্রীরামকৃষ্ণের সেই বিখ্যাত বাণী, “টাকা মাটি, মাটি টাকা।” মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “রামকৃষ্ণ, সারদা, বিবেকানন্দর মতো মনীষীদের আদর্শের প্রয়োজন এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। তাঁদের বাণী আমাদের সমাজের চরিত্র গঠনে সহায়ক।”

এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন শ্রীরামকৃষ্ণের ‘কথামৃত’, বিবেকানন্দর ‘তরুণের স্বপ্ন’— এই গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থগুলির কথা, যেগুলি আজকের যুবসমাজের পথপ্রদর্শক হতে পারে বলে মত প্রকাশ করেন।

এই মঞ্চ থেকেই বাংলা ভাষার সম্মানহানির বিরুদ্ধে সুর চড়ান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “যে ভাষায় রামকৃষ্ণ, সারদা, বিবেকানন্দের বাণী তৈরি হয়েছে, সেই ভাষার অবমাননা বাংলার মানুষ মেনে নেবে না। বাংলাকে হেয় করা হলে প্রতিবাদ হবেই।” কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে নিয়ে বারবার আক্রমণের বিরুদ্ধে এই মন্তব্যে রাজনৈতিক বার্তাও দিয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সফর শুধুমাত্র বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা নয়, বরং রামকৃষ্ণদেবের স্মৃতি বিজড়িত কামারপুকুরের সার্বিক উন্নয়নের জন্য এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হয়ে রইল। ধর্মীয় সহনশীলতা, সাংস্কৃতিক গৌরব এবং বাংলার ভাষা— তিনটি স্তম্ভেই বার্তা দিলেন তিনি। ১০ কোটি টাকার অনুদান এবং ডেভেলপমেন্ট বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন প্রশাসনিক গুরুত্ব বহন করে, অন্যদিকে তেমনি বাংলার আত্মপরিচয়কে পুনরায় সামনে তুলে আনে।