“বিশ্বে হিন্দু ধর্মের ২ প্রতিষ্ঠাতার একজন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়”

পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ পার্থ ভৌমিক এক বক্তৃতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) হিন্দু ধর্মের একজন প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বর্ণনা করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে…

Mamata Banerjee Hinduism

পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ পার্থ ভৌমিক এক বক্তৃতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) হিন্দু ধর্মের একজন প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বর্ণনা করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে তৃণমূল কংগ্রেসের একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে পার্থ ভৌমিক বলেন, “বিশ্বে হিন্দু ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মাত্র দুজন মানুষ। একজন স্বামী বিবেকানন্দ, যিনি শিকাগো শহরে বক্তৃতা দিয়ে হিন্দু ধর্মের মহত্ত্ব তুলে ধরেছিলেন। আর অন্যজন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি দুর্গা পূজার কার্নিভালের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে হিন্দু ধর্মের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন।”

স্বামী বিবেকানন্দ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: এক তুলনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি
পার্থ ভৌমিকের এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চর্চার সৃষ্টি করেছে। স্বামী বিবেকানন্দ হিন্দু ধর্মের মহান দার্শনিক এবং রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিষ্ঠাতা। ১৮৯৩ সালে শিকাগোর ধর্ম মহাসভায় তাঁর ঐতিহাসিক বক্তৃতা হিন্দু ধর্মের গভীরতা ও সার্বজনীনতাকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছিল। এই বক্তৃতার মাধ্যমে বিবেকানন্দ শুধু হিন্দু ধর্মকে নয়, গোটা ভারতীয় দর্শনকেই গৌরবময় জায়গায় পৌঁছে দেন।

   

অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রতি বছর কলকাতায় দুর্গা পূজার কার্নিভাল আয়োজন করেন। এই কার্নিভাল, যেখানে দুর্গা প্রতিমার শোভাযাত্রা হয়, তা এক অনন্য সাংস্কৃতিক উদ্যোগ হিসেবে পরিচিত। বিদেশি পর্যটকদের উপস্থিতি এবং উৎসবের বিশ্বায়নের কারণে এটি বিশ্বমঞ্চে হিন্দু ধর্মের একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পার্থ ভৌমিকের মতে, এই উদ্যোগ হিন্দু সংস্কৃতিকে নতুন করে আন্তর্জাতিক পরিচিতি দিয়েছে।

Partha Bhoumik

দুর্গা পূজা: একটি বিশ্বব্যাপী উৎসব
পশ্চিমবঙ্গে দুর্গা পূজা শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক উৎসব যা সমাজের সব স্তরের মানুষকে একত্রিত করে। ইউনেস্কো ২০২১ সালে কলকাতার দুর্গা পূজাকে “মানবতার অস্পৃশ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য” হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এই পূজা বিশ্বমঞ্চে একটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। কার্নিভাল শুধু একটি শোভাযাত্রা নয়, এটি রাজ্যের পর্যটন শিল্প এবং অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করেছে।

তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংস্কৃতিক উদ্যোগ এবং ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থান পশ্চিমবঙ্গে সামাজিক সম্প্রীতির মডেল তৈরি করেছে। দুর্গা পূজা কার্নিভাল এই রাজ্যের গৌরব এবং জাতির ঐতিহ্যকে তুলে ধরার একটি মাধ্যম।

পার্থ ভৌমিকের মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্ক থাকলেও এটি একটি বাস্তব সত্য যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গা পূজা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে স্বামী বিবেকানন্দের মতো ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তুলনা করা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। এই মন্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক চললেও, হিন্দু ধর্মের বিশ্বায়নে বাংলার ভূমিকা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।